ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজেশন পলিসি ২০২৫-শর্ট ভিডিও মনিটাইজেশন সম্পর্কে
আপনারা অনেকেই জানতে চান।ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজেশন পলিসি ২০২৫ হলো একটি
গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা, যা কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের আয়ের সুযোগ সুনিশ্চিত করতে
সহায়তা করে। এই নীতিমালার মাধ্যমে ইউটিউব নির্ধারণ করে কোন চ্যানেলগুলো তাদের
ভিডিও থেকে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আয় করতে পারবে।
২০২৫ সালের নীতিমালায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে, যেমন:
সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা, ঘন্টাপ্রতি দর্শন (watch hours), কমিউনিটি গাইডলাইন অনুসরণ
এবং মূলত কনটেন্টের গুণমান ও স্বতন্ত্রতা। পাশাপাশি শর্টস কনটেন্ট তৈরির
ক্ষেত্রেও নতুন কিছু নিয়ম যুক্ত হয়েছে।
ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজেশন পলিসি ২০২৫ হল এমন একটি নির্দেশিকা, যা কনটেন্ট
নির্মাতাদের জন্য তাদের চ্যানেল থেকে অর্থ উপার্জনের পথ উন্মুক্ত করে। এই পলিসির
অধীনে, একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটর ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামে (YPP) যুক্ত হয়ে
বিজ্ঞাপন, চ্যানেল মেম্বারশিপ, সুপার চ্যাট, সুপার স্টিকার, অ্যাফিলিয়েট
মার্কেটিং এবং ইউটিউব প্রিমিয়াম রেভিনিউর মাধ্যমে আয় করতে পারেন।
২০২৫ সালে ইউটিউব তাদের পলিসিতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে, যাতে
মনিটাইজেশন প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ, নিরাপদ এবং ব্যবহারকারীবান্ধব হয়। এখন
মনিটাইজেশনের জন্য সর্বনিম্ন ৫০০ সাবস্ক্রাইবার, সর্বশেষ ৯০ দিনে কমপক্ষে ৩,০০০
ঘন্টা পাবলিক ওয়াচ টাইম অথবা ৩০ লাখ শর্টস ভিউস অর্জন করতে হবে।
তবে বিজ্ঞাপন আয়ের সম্পূর্ণ সুবিধা পেতে হলে আগের মতোই ১,০০০ সাবস্ক্রাইবার এবং
৪,০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম অথবা ১ কোটির বেশি শর্টস ভিউস থাকতে হবে।পাশাপাশি, ইউটিউব
কনটেন্টের মান, মৌলিকতা এবং কমিউনিটি গাইডলাইন মেনে চলার ওপর বিশেষ গুরুত্ব
দিয়েছে। কোনো প্রকার কপিরাইট লঙ্ঘন, ভুল তথ্য ছড়ানো বা হিংসাত্মক বক্তব্য
মনিটাইজেশনের সুযোগ বন্ধ করে দিতে পারে।
এছাড়াও শিশুদের জন্য কনটেন্ট তৈরি হলে "Made for Kids" লেবেল ঠিকভাবে ব্যবহার করা
বাধ্যতামূলক। ইউটিউব ২০২৫ সালে এআই-জেনারেটেড কনটেন্ট সম্পর্কেও নতুন নিয়ম এনেছে,
যাতে স্পষ্টভাবে জানাতে হয় কনটেন্টের কোন অংশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি। এই
নীতিমালাগুলো কনটেন্ট নির্মাতাদের জন্য যেমন একটি গাইডলাইন হিসেবে কাজ করে, তেমনি
দর্শকদের জন্য একটি নিরাপদ ও মানসম্পন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করে। মনিটাইজেশন পলিসি
২০২৫ কেবল আয়ের পথ নয়, বরং একটি দায়িত্বশীল কনটেন্ট সংস্কৃতির দিকেও নির্দেশ
করে।
ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজেশন পলিসি ২০২৫-
দর্শনের সময় বা ওয়াচ টাইম:
শেষ ৯০ দিনের মধ্যে আপনার ভিডিওগুলোতে কমপক্ষে ৩,০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম থাকতে
হবে। আর পুরোদমে মনিটাইজেশনের জন্য লাগবে ৪,০০০ ঘন্টা।
শর্টস ভিডিওর জন্য আলাদা শর্ত:
যারা শর্টস ভিডিও বানান, তাদের শেষ ৯০ দিনে ৩০ লাখ শর্টস ভিউ থাকতে হবে। পুরো
সুযোগ পেতে ১ কোটির বেশি শর্টস ভিউ প্রয়োজন।
মূল ও নিজের তৈরি কনটেন্ট:
মনিটাইজড হতে চাইলে ভিডিও অবশ্যই আপনার নিজের বানানো হতে হবে। কপি করা,
রিইউজড বা অন্যের ভিডিও ব্যবহার করলে মনিটাইজেশন বাতিল হতে পারে।
কমিউনিটি গাইডলাইন মানা বাধ্যতামূলক:
আপনার ভিডিওতে গালাগালি, হিংসা, বিভ্রান্তিকর তথ্য বা কোনো অবৈধ কিছু থাকলে
মনিটাইজেশন বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।
শিশুদের জন্য কনটেন্ট হলে স্পষ্ট উল্লেখ করতে হবে:
যদি ভিডিওটি শিশুদের জন্য হয়, তাহলে “Made for Kids” অপশন ঠিকভাবে সেট করতে
হবে।
AI বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি কনটেন্টে সতর্কতা:
ভিডিওর কোনো অংশ AI দিয়ে বানালে সেটা স্পষ্টভাবে জানাতে হবে, না হলে চ্যানেল
বিপদে পড়তে পারে।
চ্যানেল নিয়মিত সক্রিয় থাকতে হবে:
লম্বা সময় ভিডিও না দিলে বা চ্যানেল নিষ্ক্রিয় থাকলে মনিটাইজেশন স্থগিত হতে
পারে।
কমিউনিটি ও দর্শকের সাথে সম্পর্ক গড়ার গুরুত্ব:
কমেন্টে রিপ্লাই দেওয়া, কমিউনিটি পোস্ট ব্যবহার করা — এসব ইউটিউব পজিটিভলি
নেয়।
নিয়ম ভাঙলে সরাসরি মনিটাইজেশন বন্ধ হতে পারে:
একবার মনিটাইজড হয়ে গেলেও নিয়ম না মানলে ইউটিউব আপনার আয়ের পথ বন্ধ করে দিতে
পারে।
ইউটিউব মনিটাইজেশন পলিসি ২০২৫ নতুন করে কী কী বদল এলো?
২০২৫ সালে ইউটিউব মনিটাইজেশন পলিসিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে
যা নতুন এবং পুরোনো কনটেন্ট নির্মাতাদের জন্য খুবই জানা দরকার। আগের নিয়মে
মনিটাইজেশন চালু করার জন্য এক হাজার সাবস্ক্রাইবার ও চার হাজার ঘণ্টা ওয়াচ টাইম
লাগত। এখন ইউটিউব একটু সহজ পথ রেখেছে। এখন পাঁচশ সাবস্ক্রাইবার আর তিন হাজার
ঘণ্টা ওয়াচ টাইম বা শর্টস ভিডিওর ক্ষেত্রে ত্রিশ লাখ ভিউ থাকলেই চ্যানেল
মনিটাইজেশনের জন্য প্রাথমিকভাবে যোগ্য হবে।
তবে এই পর্যায়ে সব সুবিধা পাওয়া যায় না। শুধু নির্দিষ্ট কিছু আয় করার ফিচার চালু
হয় যেমন সুপার চ্যাট বা চ্যানেল মেম্বারশিপ। পুরো বিজ্ঞাপন আয়ের সুযোগ পেতে হলে
আগের মতোই এক হাজার সাবস্ক্রাইবার ও চার হাজার ঘণ্টার শর্ত পূরণ করতে হবে।এছাড়া
শর্টস কনটেন্ট নির্মাতাদের জন্য নতুন করে কিছু নিয়ম যুক্ত হয়েছে।
এখন শর্ট ভিডিও থেকেও ভালো আয় করার সুযোগ তৈরি হয়েছে তবে কনটেন্ট হতে হবে
সম্পূর্ণ নিজস্ব এবং মৌলিক। অন্য কারো ভিডিও কেটে ব্যবহার করলে বা পুরোনো ভিডিও
পুনরায় আপলোড করলে মনিটাইজেশন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।এ বছর ইউটিউব একটি বড় পরিবর্তন
এনেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই তৈরি ভিডিও নিয়ে।
যদি ভিডিওর কোনো অংশ এআই দিয়ে বানানো হয় তবে সেটা দর্শকদের জানাতে হবে না জানালে
চ্যানেলকে শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে।সবচেয়ে বড় কথা হলো ইউটিউব এখন কনটেন্টের
গুণমান আর স্বচ্ছতা নিয়ে আগের চেয়ে অনেক বেশি কঠোর হয়েছে। তাই যারা ইউটিউব থেকে
আয় করতে চান তাদের নিয়মগুলো ভালোভাবে জেনে বুঝে কনটেন্ট তৈরি করাই সবচেয়ে ভালো।
মনিটাইজেশনের জন্য সর্বনিম্ন সাবস্ক্রাইবার ও ওয়াচ টাইমের শর্ত
ইউটিউব থেকে আয় করার জন্য চ্যানেল মনিটাইজেশন চালু করতে হলে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত
পূরণ করতে হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি শর্ত হলো সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা
এবং ওয়াচ টাইম বা দর্শনের সময়। ২০২৫ সালের নিয়ম অনুযায়ী, ইউটিউব এখন দুই ধাপে
মনিটাইজেশন সুবিধা দিচ্ছে। প্রথম ধাপে, চ্যানেলের অন্তত পাঁচশ সাবস্ক্রাইবার
থাকতে হবে এবং শেষ ৯০ দিনের মধ্যে কমপক্ষে তিন হাজার ঘণ্টা ওয়াচ টাইম অর্জন করতে
হবে অথবা শর্টস ভিডিওর ক্ষেত্রে পঁইত্রিশ লাখ ভিউ থাকতে হবে।
এই পর্যায়ে চ্যানেল সুপার চ্যাট, সুপার স্টিকার, চ্যানেল মেম্বারশিপ এবং
প্রিমিয়াম রেভিনিউর মতো কিছু নির্দিষ্ট সুবিধা ব্যবহার করতে পারবে।দ্বিতীয় ধাপে,
পুরোপুরি মনিটাইজেশন চালু করতে হলে আগের মতোই এক হাজার সাবস্ক্রাইবার এবং গত ১২
মাসে অন্তত চার হাজার ঘণ্টা পাবলিক ওয়াচ টাইম অর্জন করতে হবে।
কেউ যদি শর্টস ভিডিওর মাধ্যমে মনিটাইজেশন পেতে চান, তাহলে তার শর্টস ভিডিওতে
অন্তত এক কোটির বেশি ভিউ থাকতে হবে।এই শর্তগুলো ইউটিউব নির্ধারণ করেছে যেন
কনটেন্ট নির্মাতারা নিয়মিত ও মানসম্মত ভিডিও তৈরি করেন এবং দর্শকদের আকর্ষণ করতে
পারেন। এটি কেবল আয় করার শর্ত নয়, বরং একটি মানদণ্ড-যার মাধ্যমে ইউটিউব যাচাই করে
কোন চ্যানেলটি প্ল্যাটফর্মের জন্য উপযুক্ত।
অনেকেই ভাবেন শুধুমাত্র সাবস্ক্রাইবার বাড়ালেই চলবে, কিন্তু সত্যি হলো ওয়াচ টাইমও
সমান গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ইউটিউব দেখছে আপনার ভিডিও মানুষ কত সময় ধরে দেখে এবং
কতটা উপভোগ করে।তাই যারা ইউটিউবে আয় করতে চান, তাদের উচিত ধৈর্য ধরে গুণগত
মানসম্পন্ন ভিডিও তৈরি করা এবং নিয়মিতভাবে চ্যানেল পরিচালনা করা।
শর্টস ভিডিও নির্মাতাদের জন্য আলাদা নিয়ম
২০২৫ সালের ইউটিউব মনিটাইজেশন পলিসিতে শর্টস ভিডিও নির্মাতাদের জন্য কিছু আলাদা
নিয়ম চালু করা হয়েছে। যারা মূলত ছোট ভিডিও বানিয়ে চ্যানেল পরিচালনা করেন, তাদের
জন্য এ নিয়মগুলো জানা অত্যন্ত জরুরি। শর্টস ভিডিওর মূল বৈশিষ্ট্য হলো এগুলো ৬০
সেকেন্ডের মধ্যে হয় এবং মোবাইল ফোন দিয়ে উলম্বভাবে তোলা হয়, যা খুব দ্রুত ভাইরাল
হওয়ার সুযোগ রাখে।
ইউটিউব এখন শর্টস কনটেন্ট নির্মাতাদের মনিটাইজেশন সুবিধা দিতে আলাদা শর্ত রেখেছে।
সাধারণত যারা শুধু শর্টস বানান, তাদের জন্য পূর্ণ মনিটাইজেশন চালু করতে হলে
চ্যানেলে অন্তত এক হাজার সাবস্ক্রাইবার থাকতে হবে এবং গত ৯০ দিনের মধ্যে শর্টস
ভিডিওতে কমপক্ষে এক কোটি (১০ মিলিয়ন) ভিউ থাকতে হবে।শুধু তাই নয়, শর্টস ভিডিওর
মাধ্যমে আয় করতে হলে কনটেন্ট অবশ্যই হতে হবে নিজের তৈরি এবং মৌলিক।
কেউ যদি অন্য কারো ভিডিও ক্লিপ কেটে ব্যবহার করেন, বা মিউজিক বা দৃশ্য জোড়া দিয়ে
কৃত্রিম ভিডিও তৈরি করেন, তাহলে সেই কনটেন্ট মনিটাইজযোগ্য হবে না। ইউটিউব এখন এআই
বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি ভিডিওতেও সতর্ক নজর রাখছে, বিশেষ করে শর্টসের
ক্ষেত্রে।আরো একটি বিষয় হলো, শর্টস থেকে আয় হয় একটু ভিন্নভাবে।
এখানে ভিডিওতে বিজ্ঞাপন না দেখিয়ে ইউটিউব একটি নির্দিষ্ট রেভিনিউ পুল থেকে শর্টস
নির্মাতাদের অর্থ দিয়ে থাকে, যার পরিমাণ নির্ভর করে ভিউয়ের সংখ্যা ও কনটেন্টের
মানের ওপর। অর্থাৎ যত বেশি মানসম্পন্ন ও জনপ্রিয় শর্টস বানানো যাবে, আয়ের সুযোগ
ততই বাড়বে।শর্টস ভিডিও নির্মাতাদের জন্য ইউটিউব এখন একটি বড় সুযোগ তৈরি করেছে,
তবে তার জন্য নিয়ম মেনে, কষ্ট করে, এবং নিজের মতো করে ভিডিও বানানোই সবচেয়ে
জরুরি।
মূল এবং স্বতন্ত্র কনটেন্টের গুরুত্ব
ইউটিউবের বর্তমান নীতিমালায় মূল এবং স্বতন্ত্র কনটেন্টের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি
দেওয়া হচ্ছে। ২০২৫ সালের মনিটাইজেশন পলিসিতে ইউটিউব পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে,
যারা কেবল অন্যের ভিডিও থেকে ক্লিপ নিয়ে কনটেন্ট তৈরি করেন বা আগের তৈরি ভিডিও
সামান্য পরিবর্তন করে পুনরায় আপলোড করেন, তারা মনিটাইজেশনের জন্য উপযুক্ত হবেন
না।
ইউটিউব চায় প্রতিটি কনটেন্ট নির্মাতা যেন নিজস্ব চিন্তা ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে
ভিডিও তৈরি করে এবং দর্শকদের কিছু নতুন ও মানসম্মত দেখাতে পারে। মূল ভিডিও মানে
এমন কনটেন্ট যা আপনার নিজের পরিকল্পনায়, নিজের ভাষায় বা নিজের ক্যামেরায় তৈরি।
স্বতন্ত্র কনটেন্ট মানে যা আর কোথাও আগে প্রকাশ হয়নি বা অন্য কারো কাজ থেকে হুবহু
নেয়া হয়নি।
বর্তমানে অনেকেই শর্টস, রিঅ্যাকশন ভিডিও, কনটেন্ট রি-ইউজ করে চ্যানেল চালাচ্ছেন।
যদিও এতে দ্রুত ভিউ আসে, কিন্তু ইউটিউব এখন এসবের ওপর কড়া নজর রাখছে। বিশেষ করে
এআই দিয়ে বানানো ভিডিও বা টেক্সট টু ভিডিও কনটেন্ট যদি স্বচ্ছভাবে প্রকাশ না করা
হয়, তবে সেটাও অরিজিনাল কনটেন্ট হিসেবে বিবেচিত হবে না।
ইউটিউব এখন চায় এমন ভিডিও যেটা দর্শকদের উপকারে আসে, গঠনমূলক কিছু শেখায় অথবা
বিনোদন দেয় -কিন্তু সেটার পেছনে যেন নির্মাতার নিজস্ব ভাবনা থাকে।এমনকি যারা
গেমিং, রিভিউ বা টিউটোরিয়াল ভিডিও বানান, তাদের ক্ষেত্রেও চায় নিজস্ব উপস্থাপন,
ভয়েসওভার, ব্যাখ্যা ও ব্যতিক্রমধর্মী স্টাইল।
কেবল স্ক্রিন রেকর্ডিং করলেই হবে না, সেটাতে আপনাকেও যুক্ত থাকতে হবে।ইউটিউবে
টিকে থাকতে হলে নিজের কনটেন্ট নিজে বানানো ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
কমিউনিটি গাইডলাইন মেনে চলার প্রয়োজনীয়তা
ইউটিউব একটি উন্মুক্ত ভিডিও প্ল্যাটফর্ম হলেও এখানে কাজ করার জন্য কিছু নিয়ম বা
গাইডলাইন কঠোরভাবে মেনে চলতে হয়, যাকে বলা হয় কমিউনিটি গাইডলাইন। ২০২৫ সালের
ইউটিউব মনিটাইজেশন পলিসিতে এই নিয়মগুলোর গুরুত্ব আরও বেড়েছে। এখন শুধু ভালো ভিডিও
বানালেই হবে না, বরং ভিডিওর বিষয়বস্তু যেন ইউটিউবের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ
হয়, তা নিশ্চিত করাও নির্মাতার দায়িত্ব।
এই গাইডলাইন মূলত নির্ধারণ করে কী ধরনের ভিডিও ইউটিউবে আপলোড করা যাবে এবং কী
ধরনের কনটেন্ট নিষিদ্ধ। যেমন হিংসা, ঘৃণামূলক বক্তব্য, মিথ্যা তথ্য, যৌন
ইঙ্গিতপূর্ণ কনটেন্ট, শিশুদের নিয়ে আপত্তিকর কিছু বা অবৈধ কাজ দেখানো হলে সেই
ভিডিও শুধু সরিয়ে নেওয়া হয় না, বরং পুরো চ্যানেলের মনিটাইজেশনও বন্ধ হয়ে যেতে
পারে।
কমিউনিটি গাইডলাইন মেনে চলা মানে শুধু নিয়ম মানা নয়, বরং এটি একটি দায়িত্বশীল
কনটেন্ট নির্মাতার পরিচয়। একজন ইউটিউবারের ভিডিও যদি সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ায় বা
কারও অনুভূতিতে আঘাত করে, তাহলে তা শুধু নৈতিক দিক থেকে ভুল নয়, বরং
প্ল্যাটফর্মের দৃষ্টিতেও একটি বড় অপরাধ।তাছাড়া ইউটিউব এখন ভিডিওগুলো অ্যালগরিদম ও
মানুষের হাতে পর্যালোচনা করায়, তাই নিয়ম ভঙ্গ করলে তা ধরা পড়া সময়ের ব্যাপার
মাত্র।
এমনকি একাধিকবার গাইডলাইন ভাঙলে চ্যানেল একেবারেই বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।সুতরাং
যারা ইউটিউবকে দীর্ঘমেয়াদে একটি পেশা হিসেবে নিতে চান, তাদের উচিত প্রতিটি ভিডিও
আপলোডের আগে ভাবা – এটি কি ইউটিউবের নীতি মেনে চলছে, এটি কি দর্শকদের জন্য
নিরাপদ। কারণ ভালো কনটেন্টের সঙ্গে দায়িত্বশীল আচরণই একজন সফল ইউটিউবারের মূল
চাবিকাঠি।
AI দিয়ে তৈরি ভিডিওর জন্য নতুন সতর্কতা ও নিয়ম
২০২৫ সালে ইউটিউব কনটেন্ট নির্মাতাদের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা AI ব্যবহার
নিয়ে নতুন কিছু নিয়ম চালু করেছে, যা বিশেষভাবে জানা জরুরি। এখন অনেকেই ভিডিও
তৈরিতে AI টুল ব্যবহার করছেন, যেমন টেক্সট-টু-স্পিচ, এআই ভয়েসওভার, এআই
অ্যানিমেশন, এমনকি পুরোপুরি AI দিয়ে তৈরি স্ক্রিপ্ট ও ভিজ্যুয়াল।
এতে কনটেন্ট নির্মাণ সহজ হলেও ইউটিউব এখন এই ধরনের ভিডিওর স্বচ্ছতা ও
বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে নতুন নিয়ম চালু করেছে। ইউটিউব স্পষ্টভাবে জানিয়েছে,
যদি ভিডিওর কোনো অংশ AI দিয়ে তৈরি হয়, তাহলে তা দর্শকদের জানাতে হবে। ভিডিও
আপলোডের সময় “altered or synthetic content” ট্যাগ ব্যবহার করতে হবে, যেন দর্শক
বুঝতে পারেন, ভিডিওটি পুরোপুরি মানুষের তৈরি না।
এই নিয়মটি মূলত ভুল তথ্য, প্রতারণা ও বিভ্রান্তি ঠেকানোর জন্য চালু করা হয়েছে।
যেমন, কেউ যদি এআই দিয়ে কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা সেলিব্রেটির মুখে ভুয়া কথা
বলায়, সেটি দর্শকদের বিভ্রান্ত করতে পারে এবং সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ইউটিউব এমন কনটেন্টকে এখন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে।
যদি কেউ ইচ্ছে করে AI ব্যবহারের তথ্য গোপন করে, তবে তার ভিডিও মনিটাইজেশন বন্ধ
হয়ে যেতে পারে, এমনকি চ্যানেল স্ট্রাইকও পেতে পারে।তবে যারা সৎভাবে AI ব্যবহার
করে, যেমন ভয়েসওভার বা ব্যাকগ্রাউন্ড ইফেক্টে, এবং সেটি সঠিকভাবে প্রকাশ করেন,
তাদের সমস্যা হবে না। বরং ইউটিউব চায় কনটেন্ট আরও উন্নত হোক, কিন্তু তা যেন
স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য হয়।AI দিয়ে ভিডিও বানানো এখন আর অপরাধ নয়, তবে সত্য গোপন
করলেই বিপদ। সততা, স্বচ্ছতা আর দায়িত্বই হচ্ছে এই নতুন নিয়মের মূল কথা।
শিশুবান্ধব কনটেন্ট হলে কীভাবে সেটিংস ঠিক করবেন
যদি আপনি ইউটিউবে এমন কোনো ভিডিও আপলোড করেন যা শিশুদের জন্য উপযোগী, তাহলে
সেটিকে “শিশুবান্ধব” বা “Made for Kids” হিসেবে সঠিকভাবে নির্ধারণ করা অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। ইউটিউবের ২০২৫ সালের পলিসি অনুযায়ী, শিশুদের জন্য তৈরি কনটেন্টে
ভুল ক্যাটাগরি দিলে শুধু ভিডিও নয়, পুরো চ্যানেলকেই শাস্তির মুখে পড়তে হতে
পারে।
তাই ভিডিও আপলোডের সময় “Audience” সেকশনে গিয়ে জানতে চাওয়া হয়, “Is this video
made for kids?” - তখন সঠিক উত্তর দেওয়া বাধ্যতামূলক। যদি ভিডিওতে কার্টুন,
অ্যানিমেশন, খেলনা, বাচ্চাদের গল্প বা শেখার কনটেন্ট থাকে, তাহলে এটি “Yes, it’s
made for kids” নির্বাচন করতে হবে।এই সেটিংসটি শুধুই নিয়ম মানার জন্য নয়, বরং এটি
ইউটিউবকে সাহায্য করে সঠিক দর্শকের কাছে ভিডিওটি পৌঁছে দিতে।
যদি ভিডিওটি শিশুদের জন্য হয় এবং সেটিকে “No” নির্বাচন করা হয়, তাহলে YouTube
ভুলভাবে সেটিকে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাজেস্ট করতে পারে, যা একদমই অনুচিত। আবার
যদি ভিডিও মূলত বড়দের জন্য হয়, কিন্তু সেটিকে ভুল করে “Made for Kids” দেওয়া হয়,
তাহলে কমেন্ট, বিজ্ঞাপন, নোটিফিকেশনসহ অনেক ফিচার বন্ধ হয়ে যাবে, যা চ্যানেলের
বৃদ্ধিতে বাধা দিতে পারে।
বিশেষ করে আজকের দিনে, শিশুদের অনলাইনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করাকে ইউটিউব খুবই
গুরুত্বের সঙ্গে দেখে। তাই কনটেন্ট তৈরি করার সময় কাদের জন্য তা বানানো হচ্ছে,
সেটা পরিষ্কারভাবে বুঝে সেটিংস নির্বাচন করা জরুরি।শিশুবান্ধব ভিডিও বানালে
সেটিকে সঠিকভাবে ট্যাগ করা শুধু নিয়ম নয়, এটি শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা ও
প্ল্যাটফর্মের প্রতি আমাদের দায়িত্ববোধের অংশ।
চ্যানেলের নিয়মিত কার্যক্রম ও সক্রিয়তা কেন গুরুত্বপূর্ণ
ইউটিউবে সফল হওয়ার জন্য কেবল ভালো কনটেন্ট তৈরি করাই যথেষ্ট নয়, সেই কনটেন্ট
নিয়মিতভাবে আপলোড করাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। চ্যানেলের নিয়মিত কার্যক্রম এবং
সক্রিয়তা ইউটিউব অ্যালগরিদমের চোখে একটি বড় মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়। যারা
মাঝেমধ্যে ভিডিও আপলোড করেন বা অনেক দিন কোনো কনটেন্ট ছাড়াই চ্যানেল বন্ধ রাখেন,
তাদের ভিডিও ইউটিউব সাধারণত দর্শকদের কাছে কম প্রদর্শন করে।
এর ফলে চ্যানেলের ভিউ, সাবস্ক্রাইবার এবং সবশেষে আয়ের পরিমাণও কমে যায়।২০২৫ সালের
ইউটিউব মনিটাইজেশন নীতিতে সক্রিয়তার বিষয়টিকে আরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইউটিউব
এখন চায় এমন চ্যানেল যেগুলো নিয়মিত ভিডিও আপলোড করে, কমিউনিটির সঙ্গে যোগাযোগ
রাখে এবং দর্শকদের জন্য ধারাবাহিকভাবে কনটেন্ট সরবরাহ করে।
এমনকি আপনি যদি সপ্তাহে একবার একটি ভিডিওও আপলোড করেন, সেটিও আপনার সক্রিয়তার
প্রমাণ হিসেবে ধরা হয়। এ ছাড়া কমিউনিটি ট্যাবে পোস্ট দেওয়া, কমেন্টের উত্তর দেওয়া
এবং চ্যানেলের আপডেট রাখা এসবও সক্রিয়তার মধ্যে পড়ে।অন্যদিকে, যদি কেউ কেবল
মনিটাইজেশন পেয়ে বসে থাকেন এবং দীর্ঘদিন কোনো ভিডিও না আপলোড করেন, তাহলে ইউটিউব
সেই চ্যানেলকে নিষ্ক্রিয় হিসেবে ধরে নিতে পারে এবং মনিটাইজেশন সুবিধা স্থগিত করে
দিতে পারে।
নিয়মিত কনটেন্ট দেওয়ার আরেকটি বড় উপকার হলো দর্শকদের সঙ্গে একটি সম্পর্ক তৈরি
হওয়া। দর্শকরা তখন জানে আপনি নিয়মিত ভিডিও দেন, ফলে তারা আপনার চ্যানেলে ফিরে
আসেন।ইউটিউবে সফল ও টিকে থাকতে হলে শুধু ভালো কনটেন্ট নয়, নিয়মিত ও সক্রিয় থাকা
জরুরি-এটাই ইউটিউবের চোখে একটি বিশ্বস্ত কনটেন্ট নির্মাতার পরিচয়।
নিয়ম ভাঙলে কী ধরনের শাস্তি হতে পারে
ইউটিউবে কাজ করতে গেলে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন বা গাইডলাইন মেনে চলা
বাধ্যতামূলক। যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বা অজান্তেই এই নিয়মগুলো ভঙ্গ করে, তাহলে
ইউটিউব বেশ কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিতে পারে। ২০২৫ সালের নতুন পলিসি অনুযায়ী,
ইউটিউব এখন মনিটাইজেশন চালু হওয়ার পরও নিয়ম ভাঙলে আয়ের সুযোগ বন্ধ করে দিতে
পারে।
সবচেয়ে সাধারণ শাস্তি হলো “স্ট্রাইক” দেওয়া। কেউ যদি ইউটিউবের কমিউনিটি গাইডলাইন
বা কপিরাইট নিয়ম ভাঙে, তাহলে প্রথমবারে একটি সতর্কতা দেওয়া হয়। এরপর যদি আবারও
একই ধরনের অপরাধ ঘটে, তাহলে স্ট্রাইক দেওয়া হয়। তিনটি স্ট্রাইক পেলে পুরো
চ্যানেলই বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।তবে শুধু ভিডিও সরিয়ে নেওয়া বা চ্যানেল বন্ধ
করাই নয়, নিয়ম ভাঙলে মনিটাইজেশনও সাময়িকভাবে স্থগিত করা হতে পারে।
অর্থাৎ আপনি চ্যানেল চালাতে পারবেন, কিন্তু কোনো আয় করতে পারবেন না। কিছু কিছু
ক্ষেত্রে ইউটিউব মনিটাইজেশনের জন্য চ্যানেলকে আবার রিভিউতে পাঠায়, এবং যদি তারা
দেখে যে চ্যানেল বারবার একই ধরনের নিয়ম ভেঙেছে, তবে স্থায়ীভাবে মনিটাইজেশন বন্ধ
করে দেওয়া হয়।বিশেষ করে যারা ভুল তথ্য ছড়ায়, হিংসাত্মক বা ঘৃণামূলক বক্তব্য দেয়,
কপিরাইট লঙ্ঘন করে বা শিশুদের নিয়ে আপত্তিকর কনটেন্ট তৈরি করে, তাদের বিরুদ্ধে
ইউটিউবের অবস্থান এখন খুবই কঠোর।
এমনকি এআই দিয়ে তৈরি ভুয়া ভিডিও বা প্রতারণামূলক থাম্বনেইল দিলেও শাস্তি হতে
পারে।তাই যারা ইউটিউবকে পেশা হিসেবে নিতে চান, তাদের উচিত প্রতিটি ভিডিও আপলোডের
আগে নিয়মগুলো ভালোভাবে পড়ে দেখা। কারণ একবার শাস্তি পেলেই শুধু আয় বন্ধ হয় না,
বরং চ্যানেলের বিশ্বাসযোগ্যতা, ভবিষ্যৎ উন্নতি সবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
দর্শকদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং ইউটিউবের দৃষ্টিভঙ্গি
ইউটিউব শুধু একটি ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম নয়, এটি একটি কমিউনিটি যেখানে
নির্মাতা ও দর্শকের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক অনেক গুরুত্বপূর্ণ। দর্শকদের সঙ্গে
ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলা শুধু ইউটিউব অ্যালগরিদমের জন্য নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে একটি
শক্তিশালী চ্যানেল গড়ে তুলতে এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
যারা নিয়মিত কমেন্টের উত্তর দেন, কমিউনিটি ট্যাবে দর্শকদের সঙ্গে কথা বলেন কিংবা
তাদের মতামত গুরুত্ব দিয়ে কনটেন্ট তৈরি করেন, তারা ইউটিউবের দৃষ্টিতে দায়িত্বশীল
কনটেন্ট নির্মাতা হিসেবে বিবেচিত হন।২০২৫ সালের ইউটিউব মনিটাইজেশন নীতিতে সম্পর্ক
গড়ে তোলাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
কারণ ইউটিউব চায় তার নির্মাতারা যেন শুধু ভিডিও বানিয়ে ছেড়ে না দেন, বরং দর্শকদের
সঙ্গে একটা নির্ভরযোগ্য ও আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তুলুন। এই সম্পর্ক গড়ে উঠলে
দর্শকরাও সেই চ্যানেলের প্রতি বিশ্বস্ত হয়ে পড়ে, নিয়মিত ভিডিও দেখে, শেয়ার করে
এমনকি চ্যানেল মেম্বারশিপও নেয়।এছাড়া, ইউটিউবের অ্যালগরিদম এখন শুধু ভিউ নয়,
এনগেজমেন্টকেও গুরুত্ব দেয়।
অর্থাৎ কেউ ভিডিও কতক্ষণ দেখল, কমেন্ট করল কি না, লাইক দিল কি না - এসব বিষয়কে
ধরে ইউটিউব বোঝে ভিডিওটি কতটা মানসম্মত ও প্রাসঙ্গিক।কনটেন্ট যত ভালোই হোক না
কেন, যদি আপনি দর্শকদের গুরুত্ব না দেন, তাদের সঙ্গে সংযোগ না রাখেন, তাহলে আপনার
চ্যানেল অনেকটা একমুখী হয়ে পড়ে। ইউটিউব বিশ্বাস করে, সাফল্যের আসল চাবিকাঠি হলো
-মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করা, এবং সেটি যত আন্তরিক হবে, ফল তত বেশি হবে।
শর্ট ভিডিও মনিটাইজেশন
গত কয়েক বছরে ইউটিউবে শর্ট ভিডিও বা শর্টস অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ছোট,
দ্রুতগতির এই ভিডিওগুলো দর্শকদের দ্রুত আকর্ষণ করে এবং অনেক ক্ষেত্রে চ্যানেলের
গ্রোথে বড় ভূমিকা রাখে। ইউটিউবও এখন শর্টস নির্মাতাদের জন্য বিশেষ মনিটাইজেশন
প্রোগ্রাম চালু করেছে। তবে শর্টস মনিটাইজেশন করা সহজ নয়, এতে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত
মেনে চলা প্রয়োজন।
শর্টস থেকে আয় মূলত ভিউ এবং এনগেজমেন্টের উপর নির্ভর করে, তবে বিজ্ঞাপন দেখানো হয়
না বরং ইউটিউব একটি পৃথক রেভিনিউ পুল থেকে এই আয় দেয়। তাই যারা শর্টস বানাতে ভালো
এবং নিয়মিত ভিডিও আপলোড করেন, তাদের জন্য এটি একটি নতুন আয় করার সুযোগ। তবে এই
সুবিধা পেতে হলে ইউটিউবের নির্ধারিত নিয়মকানুন মানা জরুরি।
শর্ট ভিডিও মনিটাইজেশনের শর্তসমূহ:
চ্যানেলে কমপক্ষে ১০,০০০ সাবস্ক্রাইবার থাকতে হবে
গত ৯০ দিনের মধ্যে শর্টস ভিডিওতে কমপক্ষে ১ কোটি (১০ মিলিয়ন) ভিউ থাকতে হবে
ভিডিও অবশ্যই নিজস্ব ও মৌলিক হতে হবে, অন্যের কনটেন্ট কপি করা যাবে না
ভিডিওতে অশ্লীলতা, হিংসা, ভুয়া তথ্য বা অন্য কোনো নিষিদ্ধ বিষয় থাকতে পারবে
না
ইউটিউবের কমিউনিটি গাইডলাইন ও কপিরাইট নীতিমালা মেনে চলতে হবে
চ্যানেল ও ভিডিওতে কোনো ধরনের প্রতারণামূলক বা স্প্যাম অ্যাক্টিভিটি থাকা
যাবে না
মনিটাইজেশনের জন্য ইউটিউবের নির্ধারিত অন্যান্য নীতিও মানতে হবে
এই শর্তগুলো পূরণ করলেই শর্ট ভিডিও নির্মাতারা ইউটিউব থেকে আয় করতে পারবেন এবং
নিজেদের কাজ আরও উৎসাহিত করতে পারবেন।
FAQ/সাধারণ প্রশ্নোত্তর
প্রশ্নঃ ২০২৫ সালের নগদীকরনের জন্য ইউটিউব এন নতুন নীতিমালা কি?
উত্তরঃ সর্বনিম্নএক হাজার সাবস্ক্রাইবার ও ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম অথবা
শর্ট এর ক্ষেত্রে এক কোটি ভিউ প্রয়োজন।
প্রশ্নঃ ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজ করব কিভাবে?
উত্তরঃ নিয়মিত ভিডিও আপলোড করতে হবে, চ্যানেলে এক হাজার সাবস্ক্রাইবার ও
৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম অথবা এক লক্ষ শট ভিউ থাকতে হবে।
প্রশ্নঃ ২০২৫ সালে ইউটিউব থেকে আয় করা যাবে কি?
উত্তরঃ হ্যাঁ অবশ্যই আয় করা যাবে, তবে এর জন্য নিয়মিত ভিডিও আপলোড করতে হবে এবং
কিছু শর্ত পালন করতে হবে।
প্রশ্নঃ ইউটিউব প্রতি এক হাজার ভিউতে কত টাকা দেয়?
উত্তরঃ এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে আপনি কোন ধরনের ভিডিও আপলোড করতে
করতেছেন, কোন কোন ভিডিওতে এক হাজার ভিডিওতে এক ডলার আবার কোন কোন ভিডিওতে এক
হাজার ভিউতে হাফ ডলার বা তার চেয়ে কম প্রদান করেন।
প্রশ্নঃ ২০২৫ সালে ইউটিউবে মানুষ কি দেখবে?
উত্তরঃ ২০২৫ সালে ইউটিউবে মানুষ বিভিন্ন ধরনের শর্ট ভিডিও ও গুরুত্বপূর্ণ
বিনোদন এবং শিক্ষামূলক ভিডিও দেখবে।
প্রশ্নঃ ইউটিউব থেকে মাসে এক লক্ষ টাকা আয় করা যায়?
উত্তরঃ ইউটিউব চ্যানেলের ধরন এবং ভিডিও অনুযায়ী কোন কোন ইউটিউব চ্যানেল
থেকে প্রতি মাসে ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করা যায়।
প্রশ্নঃ ইউটিউবে মানুষ কি ধরনের কনটেন্ট পছন্দ করে?
উত্তরঃ ইউটিউবে সব সময় মানুষ বিনোদনমূলক কনটেন্ট বেশি পছন্দ
করেন, এছাড়াও নাটক সিনেমা ও বিভিন্ন শিক্ষামূলক ভিডিও বেশি পছন্দ
করে।
প্রশ্নঃ ইউটিউব চ্যানেল খুলতে কত টাকা লাগবে?
উত্তরঃ ইউটিউব চ্যানেল খুলতে কোন টাকা পয়সার প্রয়োজন নাই
শুধুমাত্র পরিশ্রমের প্রয়োজন।
ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজেশন পলিসি ২০২৫ সত্যিই সময়ের সাথে খাপ খাওয়ানো একটি
গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বর্তমান ডিজিটাল যুগে কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য এটা স্পষ্ট
নির্দেশিকা দেয় যে, শুধুমাত্র ভালো ভিডিও বানানোই যথেষ্ট নয়, বরং মূল ও নৈতিক
কনটেন্ট তৈরি করাও অত্যন্ত জরুরি। নতুন নিয়মগুলো কনটেন্টের মান উন্নত করবে এবং
দর্শকদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করবে।
যদিও শর্তগুলো কঠিন মনে হতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদে এটা ইউটিউবকে আরও বিশ্বাসযোগ্য
ও সক্রিয় প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তুলবে। মনিটাইজেশনের জন্য নির্ধারিত নিয়মগুলো
ক্রিয়েটারদের দায়িত্বশীলতা বাড়াবে এবং প্ল্যাটফর্মের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে। ফলে
যারা সত্যিকার অর্থে পরিশ্রম ও সৃজনশীলতা নিয়ে কাজ করেন, তারা উপকৃত হবেন।
সামগ্রিকভাবে, এই পলিসি ডিজিটাল কনটেন্ট নির্মাণের নতুন দিশা দেখাচ্ছে।
প্রিয় পাঠক, আশা করি এ কন্টেনটি আপনাদের অনেক ভালো লাগবে এবং এই কনটেন্টের
দ্বারা আপনারা উপকৃত হতে পারবেন।যদি এই কন্টেন্টের দ্বারা আপনারা উপকৃত হয়ে
থাকেন তবে এই কনটেন্টটি আপনার বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের নিকট শেয়ার করতে
পারেন যাতে তারা এই কন্টেনিটি পড়ে উপকৃত হতে পারে।এছাড়াও প্রতিদিন আপডেট ও
নতুন নতুন তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের সাইটে ভিজিট করুন।
এট্রাকশন আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url