বাংলাদেশের সেরা ১০টি ঔষধ কোম্পানির তালিকা - হারবাল ঔষধ কোম্পানির তালিকা

বাংলাদেশের অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য সেবায় ওষুধ শিল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। বাংলাদেশে মোট প্রায় ৩০০ টি নিবন্ধিত কোম্পানি আছে। এদের মধ্য থেকে বাংলাদেশের সেরা ১০ টি ওষুধ কোম্পানির তালিকা এখানে উল্লেখ করা হলো।
বাংলাদেশের-সেরা-১০টি-ঔষধ-কোম্পানির-তালিকা
এই ১০টি কোম্পানি দেশের ওষুধের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের প্রায় ১৫০ টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করে থাকে।এতে করে একদিকে যেমন বৈদেশি মুদ্রা আয় হয় তেমনি অন্যদিকে সারা বিশ্বে একটি সুনাম অর্জন হয়। চলুন তাহলে এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে জেনে নেওয়া যাক বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানির মধ্যে কোন ১০টি কোম্পানি সবথেকে সেরা।

পোস্ট সূচিপত্রঃ বাংলাদেশের সেরা ১০টি ঔষধ কোম্পানির তালিকা - হারবাল ঔষধ কোম্পানির তালিকা

বাংলাদেশের সেরা ১০টি ঔষধ কোম্পানির তালিকা

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ওষুধ শিল্পে বাংলাদেশের অবস্থান অন্যতম। বাংলাদেশে নিবন্ধিত প্রায় ৩০০ টি কোম্পানি আছে এছাড়াও নামে বেনামে আরো ৯০০ থেকে ১০০০ টি কোম্পানি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায়। এতসব কোম্পানির মধ্যে কোন দশটি কোম্পানি সবচেয়ে শীর্ষ অবস্থানে আছে এ বিষয়ে অনেকেরই জানার আগ্রহ থাকে। ঔষধের গুণগত মান, সরবরাহ,দাম, উৎপাদন ক্ষমতা বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশের সেরা ১০ টি ওষুধ কোম্পানির তালিকা নিচে তুলে ধরা হলো।

১. স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড
বাংলাদেশের ঔষধ উৎপাদনকারী কোম্পানিদের মধ্যে সবচেয়ে বৃহত্তম কোম্পানি হল স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। স্যামসন এইচ চৌধুরি ১৯১৮ সালে এই কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেন পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে এটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত হয়। বর্তমানে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড কোম্পানি দেশের মধ্যে সবচেয়ে বৃহৎ একটি কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে।

স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি ১৯৮৭ সাল থেকে সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের এন্টিবায়োটিক ও ঔষধ রপ্তানি শুরু করে। বর্তমানে এই কোম্পানি প্রায় সারা বিশ্বের ৪২ টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছেন। এদের মধ্যে এশিয়ার প্রায় ১৯টি দেশে, আফ্রিকার ১৩ টি দেশে, ওশেনিয়া অঞ্চলের ৩টি, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার ৬টি ও যুক্তরাজ্যের বাজারে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ রপ্তানি করছেন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে স্কয়ার কোম্পানি ১৪৫ কোটি টাকার ওষুধ রপ্তানি করেছে।

বর্তমানে বাংলাদেশের স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের একটি প্রধান উৎপাদন কারখানা রয়েছে। যেটি বাংলাদেশের গাজীপুরের কালিয়াকৈর এ অবস্থিত। এছাড়াও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এর মালিকের এলাকা পাবনা ও টাঙ্গাইলে ওষুধ উৎপাদন কেন্দ্র আছে। বাংলাদেশের বাজারে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড এর মার্কেট শেয়ার ১৭ থেকে ১৮ পার্সেন্ট। যা বাংলাদেশের অন্যান্য কোম্পানির চেয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে।

এছাড়াও দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও একটি ওষুধ কারখানা তৈরি করার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালস। আর সেটি হল কেনিয়াতে একটি কারখানা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন। এই বছর শেষে কেনিয়াতে উৎপাদন কাজ শুরু করবেন এবং আফ্রিকাতে প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের ঔষধ সরবরাহ করার পরিকল্পনা করেছেন। এতে করে একদিকে যেমন খরচ কম হবে অন্যদিকে সহজেই আফ্রিকার দেশগুলোতে ঔষধ সরবরাহ সহজ হবে।

স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের দেশ-বিদেশ মিলে প্রায় ১২৪৫৩ কর্মকর্তা রয়েছে। স্কয়ার কোম্পানির বর্তমানে বিক্রয় পরিমাণ প্রায় ৫১২ মিলিয়ন ডলার আর এ তথ্যটি প্রকাশ করেছেন ফোবস্। যেখানে আমাদের দেশের স্থানীয় কোম্পানিগুলোর মূলধন ১.৭ মিলিয়ন ডলার সেখানে শুধুমাত্র স্কয়ার কোম্পানি প্রতি বছর আয় করে থাকেন ১৫০ মিলিয়ন ডলার। এই তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে খুব সহজে বলা যায় বাংলাদেশের ঔষধ কোম্পানির মধ্যে শীর্ষস্থানে অবস্থান করছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিকস লিমিটেড।

২. বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিকস লিমিটেড
বাংলাদেশের একটি বৃহৎ ও বিশ্বমানের ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হল বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। মূলত এই কোম্পানিটি যাত্রা শুরু করে ১৯৭৬ সাল থেকে। পরবর্তীতে ১৯৮০ সাল থেকে উৎপাদনের কাজ শুরু করে। ধীরে ধীরে দেশের বাজার জয় করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে একটা শক্ত অবস্থান তৈরি করে ফেলেছে। তারা জার্মানি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লাইসেন্স ব্যবহার করে উৎপাদন শুরু করলেও পরবর্তীতে নিজস্ব লাইসেন্স দিয়ে উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যান।

বর্তমানে বেক্সিমকো কোম্পানি বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশে ঔষধ রপ্তানি করে থাকে। যুক্তরাজ্যের স্টক এক্সচেঞ্জে একমাত্র বাংলাদেশই কোম্পানি হল বেক্সিমকো এবং বাংলাদেশের একমাত্র কোম্পানি যে কোম্পানিটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে তাদের পণ্য রপ্তানি করে। সারা বিশ্বের মধ্যে প্রথম বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি জেনারিক রেমডেসিভির উন্মোচন করেন।

ঢাকার নিকটস্থ জায়গায় প্রায় ২০ থেকে ২২ একর এলাকা জুড়ে বেক্সিমকোর মেইন প্লান্ট অবস্থিত। যে প্লান্টের মূল উৎপাদন হল ক্রিম, ইনজেকশন, সিরাপ, আইভী ফাঁদ, ইনহেলার, ট্যাবলেট, সাপোজিটর।

বর্তমানে এই কোম্পানিতে প্রায় ৫ হাজার কর্মী কাজ করছেন। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস এর আছে নিজস্ব গবেষণাগার যেখানে নতুন নতুন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করা হয়। বাংলাদেশের বাজারে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস এর মার্কেট শেয়ার ১০ থেকে ১২%।

৩. ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিকস লিমিটেড
বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির মধ্যে ইনসেপ্টা ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড অন্যতম। ইনসেপ্টা কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৯ সালে। এরপর থেকে ধীরে ধীরে বাংলাদেশের বাজারসহ আন্তর্জাতিক বাজারে দীর্ঘদিন থেকে অত্যন্ত সুনামের সহিত ব্যবসা করছেন। উৎপাদনের ক্ষেত্রে আধুনিক ব্যবস্থা এবং গুণগতমান ভালো হওয়ার কারণে খুব দ্রুত ভালো একটি অবস্থান তৈরি হয়েছে।

১৯৯৯ সাল থেকে শুরু করলেও মাত্র আট বছরের মাথায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুনাম অর্জন করেন। ঢাকার নিকটে ধামরায় ও সাভারে দুইটি প্রধান প্লান্ট অবস্থিত।এইসব প্লান্টে মূলত ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, সাসপেনশন, ইনজেকশন, নাচাল স্প্রে, আই ড্রপ, ইনসুলিন জাতীয় পণ্য উৎপাদন হয়। সারা দেশের প্রায়ই আট হাজার থেকে দশ হাজার কর্মী আছে ইনসেপ্টটা ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির।

ইনসেপ্টা কোম্পানি সারা বিশ্বের প্রায়ই ৭০ থেকে ৯৫ টি দেশে পণ্য সরবরাহ করে থাকে। দেশি এপিআই উৎপাদন করার জন্য ধামরাই প্লান্টে রাসায়নিক ইন্টিগ্রেশন এর কাজ চলছে। ইনসেপ্টা ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মোট চারবার জাতীয় ভাবে পুরস্কার পেয়েছেন। পণ্যের গুণগত মান ও ভালো সরবরাহ হওয়ার কারণে বাংলাদেশের মানুষের মনে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছেন। ইনসেপ্টা ফার্মাসিটিক্যালস কোম্পানির শেয়ার বাংলাদেশের বাজারে প্রায় ৮ থেকে ১০%।

৪. অপসোনিন ফার্মা লিমিটেড
বাংলাদেশের যেসব ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি আছে তাদের মধ্যে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ঔষধ উৎপাদনকারী কোম্পানি এটি। এই কোম্পানিটি যাত্রা শুরু করে ১৯৫৬ সালে। দীর্ঘদিন থেকে কোম্পানিটি গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহ, নির্ভরযোগ্যতা, উৎপাদনশীলতা, উদ্ভাবন বিভিন্ন দিক থেকে জনগণের নিকট বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অপসোনিন ফার্মা এর প্রধান অফিস হচ্ছে ঢাকায়।শুরুতে এই কোম্পানিটি পার্টনারশিপ হিসেবে ব্যবসা শুরু করলেও বর্তমানে এককভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছেন।

অপসোনিন ফার্মা সর্বপ্রথম ১৯৬২ সালে ইনজেকশন উৎপাদন এবং ১৯৮০ সালে দেশজুড়ে সরবরাহ শুরু করেন। এই কোম্পানিটি ১৯৭৬ সালে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধন পায়। অপসনিন ফার্মা লিমিটেড দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানির মাধ্যমে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করে ১৯৮৫ সালে। বর্তমানে বিশ্বের ২৫ থেকে ৩০ টি দেশে ঔষধ রপ্তানি করছেন।

অপসোনিন ফার্মা লিমিটেড কোম্পানির সদর দপ্তর ঢাকা হলেও এর বড় উৎপাদন কারখানা হচ্ছে বরিশালের রুপাতলিতে। এখানে প্রায় ৫০০ একর জমির উপরে একটি বড় আকারের কারখানা স্থাপিত আছে। এই কারখানাতে সাধারণত এন্টিবায়োটিক, ডায়াবেটিক কার্ডিওভাসকুলার ,নিউট্রাসিউটিক্যাল, স্যালাইন,ন্যাসাল স্প্রে ,ইনজেকশন,সাপোজিটর,ইনহেলার উৎপাদন করে থাকে।

বর্তমানে অপসনিন ফার্মা লিমিটেড কোম্পানিতে প্রায় ৫০০০ থেকে ১০ হাজার কর্মী কাজ করছেন। সারা বছরে এই কোম্পানির ট্রানজেকশন হয় প্রায় ২২০ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম কোম্পানি হিসেবে অবস্থান করছে এই কোম্পানিটি। বাংলাদেশ সহ বিশ্বের জেনারিক ওষুধের গুরুত্বপূর্ণ নির্মাতা হিসেবে ৬০ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করছেন। বর্তমানে বাংলাদেশে এই কোম্পানির মার্কেট শেয়ার হচ্ছে ৫ %।

৫. রেনেটা লিমিটেড
রেনেটা লিমিটেড হল বাংলাদেশের ফার্মাসিটিক্যালস ও এনিমেল হেলথ কোম্পানির মধ্যে একটি শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি। এই কোম্পানিটি ১৯৭২ সালে আইবিএম ওষুধ শিল্পের পার্ট হিসেবে যাত্রা শুরু করে। প্রথমদিকে এই কোম্পানির নাম ফাইজার লিমিটেড থাকলেও পরবর্তীতে কোম্পানি বিক্রয় হওয়ার পরে নামকরণ করা হয় রেনেটা লিমিটেড। মানব ও পশু চিকিৎসা দুটো ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।

রেনাটা লিমিটেড কোম্পানি সাধারণত মানব ও পশু শাস্ত্র বিষয়ক ১৪৫ টি মলিকিউল, ২৫৭ টি ডোজ ফর্মস উৎপাদন করছেন। বর্তমানে বাংলাদেশে এর অবস্থান হচ্ছে চতুর্থ কিন্তু পশু ঔষধ শিল্পে এর অবস্থান প্রথম। বিশ্বের প্রায় ২৭ টি দেশে পণ্য রপ্তানি করে এই কোম্পানিটি। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ল্যাটিন আমেরিকা, এশিয়া, আফ্রিকা, ইউ কে ইত্যাদি। ২০২০-২১ অর্থবছরে এই কোম্পানির টার্ন ওভার ছিল ২৯২৫ কোটি টাকা।

এই কোম্পানির মোট ১০ টি উৎপাদন কেন্দ্র আছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ভালুকা রাজেন্দ্রপুর ও মিরপুর। এছাড়াও দেশে ১৯ টি ডিপোর মাধ্যমে সারাদেশে ঔষধ সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে এই কোম্পানির বার্ষিক মুনাফা হয় ৫০৩ কোটি টাকা। বর্তমানে এই কোম্পানির কর্মীর সংখ্যা হচ্ছে ৮০০০।পণ্যর গুণগত মান দাম ও সরবরাহ সর্বদিক বিবেচনা করে কোম্পানিটি বাংলাদেশের জনগণের মনে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

৬. Eskayef ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড
ট্রান্সকম গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান হল Eskayef ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। বাংলাদেশের বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানির মধ্যে এটি অন্যতম। বর্তমানে এটি বিশ্বমানের ওষুধ তৈরি করছেন। পণ্যর গুণগত মান উৎপাদন, ব্যবসায়িক মূল্যবোধ ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হাওয়ায় বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বাজারে সুনাম অর্জন করেছেন। SK&F নামে কোম্পানিটি শুরু করলেও ১৯৯০ সালে এটি Eskayef বাংলাদেশ লিমিটেড নামে যাত্রা শুরু করে।

Eskayef এর উৎপাদন কেন্দ্র বর্তমানে মিরপুর টঙ্গী রুপগঞ্জ সহ একাধিক স্থানে রয়েছে। টঙ্গী প্লান্টে ট্যাবলেট, ইনজেকশন, স্যালাইন স্যাটেলাইট ইউনিট চালু আছে। এছাড়া অন্যান্য ইউনিটে অন্যান্য পণ্য উৎপাদন হয়। বর্তমানে প্রায় বিশ্বের ৬৭ থেকে ৭০ দেশে ওষুধ রপ্তানি করছেন এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হল ইউএসএ। ২০০১ সালের আই এম এস এর তথ্য অনুযায়ী বিশ্বজুড়ে শীর্ষ ছয় কোম্পানির মধ্য এটি একটি। এই কোম্পানিতে প্রায় সারা দেশে ২০ হাজার কর্মী নিয়োজিত আছে।

৭. হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড
১৯৮৮ সালে হেলথকেয়ার ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড নামে যাত্রা শুরু করলেও পরবর্তীতে এর নাম পরিবর্তন করে নাম রাখা হয় হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। স্থানীয় প্রতিনিধিত্বকারী কোম্পানি হিসেবে এর বেশ সুনাম ছিল। সর্বপ্রথম ১৯৬৬ সালে নিজস্ব উৎপাদন প্লান্ট চালু করে। বাংলাদেশের মানসম্মত জেনেরিক ওষুধ তৈরিতে হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন।

কোম্পানিটির হেড অফিস ঢাকা হলেও গাজীপুরে হচ্ছে এর উৎপাদন কারখানা। উৎপাদন ইউনিটে সাধারণত ক্যাপসুল, লিকুইড, সিরাপ, ক্রিম, জেল, ট্যাবলেট, আই ড্রপ ও সামান্য পরিমাণ প্যারেনটিরালস্ উৎপাদন হচ্ছে। সঠিকভাবে মান নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশেসহ বিশ্বের অনেক দেশে ওষুধ সরবরাহ করছেন। দেশের বাজারে শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে সপ্তম স্থানে অবস্থান করছে এই কোম্পানি। সারা বাংলাদেশে এই কোম্পানির প্রায়ই ৮০০০ কর্মী আছে।

সারা বাংলাদেশে ১৩ টি স্টোর হাউস, গাজীপুর সহ বিভিন্ন জায়গায় গুদাম, প্রোডাকশন ও হেড অফিস অবকাঠামো বিস্তৃত আছে। বর্তমান বাংলাদেশে এই কোম্পানির শেয়ার হলো ৪.৫ পার্সেন্ট। বাৎসরিক বৃদ্ধির হার ১৮.২৭%। নিজস্ব গবেষণাগারে বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন আধুনিক পণ্য উৎপাদনের জন্য নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে এ কোম্পানি। পণ্যের গুণগত মান উৎপাদন সরবরাহ ও দাম সুবিধা জনক হওয়ায় মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

৮. এসিআই ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড
বাংলাদেশের যেসব ঔষধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আছে তার মধ্যে অষ্টম স্থানে আছেন এসিআই ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। এটি একটি গ্রুপ অফ কোম্পানি। ১৯৯২ সালে ব্রিটিশ মাল্টিন্যাশনাল আইসি থেকে স্বাধীন হয়ে এসিআই নামে কোম্পানি গঠিত হয়। বর্তমানে এসিআই কোম্পানি উচ্চমানের জেনেটিক প্রযুক্তির ও উচ্চ মানের ঔষধ প্রস্তুতকারক ও বাজারজাতকার হিসেবে বেশ সুনাম অর্জন করেছেন।

১৯৬৮ সালে এই কোম্পানির যাত্রা শুরু করে পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে এসিআই নামকরণ করা হয়। ১৯৯৫ সালে সর্বপ্রথম এসআই ফার্মা আইএসও ৯০০১ সার্টিফিকেট প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। নারায়ণগঞ্জ এই কোম্পানির বড় একটি কারখানা রয়েছে। এই কারখানাটি অত্যন্ত উন্নতমানের ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। এখানে প্রায় ২৯২ টি সক্রিয় মৌল, ৬৫৪ টি এস কে ইউ, এছাড়াও ইনসুলিন বায়ো সিমিলার এলভিপি এসভিপি এগুলোর ফর্মুলেশন করছেন।

২০২২-২৩ অর্থবছরে এসিআই ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির শেয়ার ছিল ৩.৮%। আমাদের দেশের বাজার ছাড়াও প্রায় ৩০ টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছেন এই কোম্পানি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ইয়ামেন, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, আমেরিকা, এশিয়া ও আফ্রিকা। সারা বাংলাদেশের প্রায় ৫ হাজার কর্মী এসিআই ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানিতে চাকরি করছেন। এছাড়াও দেশজুড়ে প্রায় ১৮ টি ট্রাজেডিক ডিপো ও সরবরাহ কেন্দ্র রয়েছে।

৯. একমি ল্যাবরেটরীজ লিমিটেড
বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ও বিশ্বমানের ফার্মাসিটিক্যালস কোম্পানিগুলোর মধ্যে একমি ল্যাবরেটরীজ অন্যতম। কোম্পানিটি যাত্রা শুরু করেন ১৯৫৪ সালে। এই কোম্পানির মূলত একমি গ্রুপের একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি। ১৯৭৬ সালে কোম্পানিটি প্রথম প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর হয়। ১৯৯৫ সালে সর্বপ্রথম বিদেশের রপ্তানি শুরু করেন । ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানি।

বাংলাদেশের ধামরাই ও নারায়ণগঞ্জ দুটি জায়গায় এর প্রধান কারখানা রয়েছে যেখানে বিভিন্ন ধরনের ইনজেকশন, ট্যাবলেট, ইনহেলার, স্যালাইন, বিএসএস সেরাম পশুজাত ও হারবাল ঔষধ ফর্মুলেশন করা হয়। এছাড়া গজারিয়াতে উৎপাদন কারখানা স্থাপন করেছেন ২০০৪ সালে। বর্তমানে এই কোম্পানিতে পণ্য সংখ্যা প্রায় ৮০০ প্লাস। বাংলাদেশের সকল কোম্পানির মধ্যে এই কোম্পানির মার্কেট শেয়ার ৩.৭% থেকে ৫ পার্সেন্ট।

একমি ল্যাবরোটরিজ কোম্পানিতে মোট কর্মীর সংখ্যা প্রায় ৯০০০, যা প্রতি বছর ৫% বৃদ্ধি হয়।বর্তমান এমডি ও চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন সিনহা পরিবার যথাক্রমে মিজানুর রহমান সিনহা ও নাগিনা আফজাল সিনহা। সারা বাংলাদেশের প্রায় ১৮টি ডিপো রয়েছে, এই ডিপো গুলোর মাধ্যমে সারাদেশে পণ্য সরবরাহ করা হয়। বাংলাদেশের বাজারে এই কোম্পানির মার্কেট সাইজ ২.৪১ বিলিয়ন ডলার।

১০. এরিস্টো ফার্মা লিমিটেড
১৯৮৬ সালে এরিষ্ট ফার্মা লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বাংলাদেশের ফার্মাসিটিক্যাল খাতে অত্যন্ত সাশ্রয় ও গুণগত মানসম্পন্ন ঔষধ সরবরাহ শুরু করে। বর্তমানে দেশের ৩০০ টি নিবন্ধিত কোম্পানির মধ্যে এই কোম্পানির অবস্থান হচ্ছে দশম। ঢাকার শ্যামপুরে প্রথম কারখানা স্থাপন করা হয়। ২০০২ সালে সর্বপ্রথম দেশে স্টেরাইল চক্ষু ওষুধ উৎপাদন শুরু করে এই কোম্পানিটি। গাজীপুরে প্রায় ১৩ একর আয়তনের জমিতে একটি আধুনিক প্লান্ট স্থাপন করেছে।

বর্তমানে এই কোম্পানি বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের প্রায় ৩১ টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছেন। গুণগত মানসম্পন্ন ও সঠিক সময়ে সরবরাহ করার কারণে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে ভালো সুনাম অর্জন করেছেন। সারা দেশে প্রায় ৭ হাজার কর্মী নিয়োজিত আছে এই কোম্পানিতে। আধুনিক প্রযুক্তি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ওষুধ তৈরি এবং সাশ্রয়ী মূল্যে মানুষের কাছে ওষুধ পৌঁছে দিয়ে দেশের ঔষধ শিল্প খাতে চমৎকার ভূমিকা রাখছেন এরিস্টো ফার্ম লিমিটেড।

হারবাল ঔষধ কোম্পানির তালিকা

বাংলাদেশে প্রায় ৮০০ হারবাল কোম্পানি আছে। এসব কোম্পানিগুলোর মধ্যে কোন কোম্পানিগুলো সবচেয়ে ভালো এই বিষয়ে আপনারা অনেকেই জানতে চান।বাংলাদেশে সেই আদিকাল থেকে ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা হয়ে আসছে। বর্তমান সময়ে কোম্পানিগুলো বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক মান ও ব্রান্ড ভ্যালু যুক্ত ঔষধ নিয়ে এই খাতে যাত্রা শুরু করেছে। যা প্রায় ২০২৩ সাল পর্যন্ত ২৫০০ কোটি টাকা অর্থাৎ ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির প্রায় ১০% শেয়ার দখল করেছেন।

বাংলাদেশ হারবাল ওষুধ কোম্পানির তালিকা
  • হামদার্দ ল্যাবরেটরিজ বাংলাদেশ
  • সাধনা ঔষধালয় লিমিটেড
  • একমি ল্যাবরেটরীজ লিমিটেড হারবাল ডিভিশন
  • স্কয়ার হারবাল এন্ড নিউট্রাসিউটিক্যালস
  • ইনসেপ্টা হারবাল এন্ড নিউট্রি কেয়ার লিমিটেড
  • রেডিয়েন্ট নিউট্রাসিউটিক্যালস লিমিটেড হারবাল ডিভিশন
  • বেক্সটার হারবাল এবং নিউট্রাসিউটিক্যালস
  • ওয়েস্টার্ন ফার্মাসিটিক্যালস হারবাল ডিভিশন
  • ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড হারবাল ডিভিশন
  • রেডিয়েন্ট নিউট্রাসিউটিক্যালস লিমিটেড হারবাল ডিভিশন
  • রেনেটা লিমিটেড হারবাল ডিভিশন
  • ইবনে সিনা ন্যাচারাল মেডিসিন
  • জেবিএল ড্রাগস ল্যাবরেটরিজ ইউনানী
  • ইবনে হাইসাম হারবাল এন্ড নিউট্রাসিউটিক্যালস
  • মডান হারবাল গ্রুপ
  • অ্যাটাচ হারবাল এন্ড নিউট্রাসিউটিক্যালস
  • এপিএস ল্যাবরেটরীজ হারবাল ডিভিশন
  • অশোকা ল্যাবরেটরীজ হারবাল
  • এলিয়েন ফার্মা হারবাল ডিভিশন
  • এরিস্টো ফার্মা লিমিটেড হারবাল ডিভিশন
  • কেমিস্ট হারবাল কেয়ার এন্ড নিউট্রাসিউটিক্যালস লিমিটেড
  • কেমিকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড হারবাল ডিভিশন
  • ডিফ্লেড হারবাল ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড
  • ইসেটেক ইন কর্পোরেশন হারবাল
  • ইদরুল হারবাল এন্ড নিউট্রাসিউটিক্যালস
  • কেডি ল্যাবরেটরিজ হারবাল
  • লিড হারবাল অ্যান্ড নিউট্রাসিউটিক্যালস
  • মর্ডান হারবাল ফার্মাসিউটিক্যালস
  • মেডিমেট হারবাল এন্ড নিউট্রাসিউটিক্যালস
  • মাইক্রো নিউক্লিয়ার হারবাল
  • অপসোনিন হারবাল এন্ড নিউট্রাসিউটিক্যালস
  • অর্গানিক হার্বাল এন্ড নিউট্রাসিউটিক্যালস লিমিটেড
  • প্যারেন্ট হারবাল ল্যাবরেটরিজ
  • পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড হারবাল ডিভিশন
  • সেফ হার্বার লিমিটেড
  • এসবি হারবাল এন্ড নিউট্রাসিউটিক্যালস
  • টোটাল হারবাল এন্ড নিউট্রাসিউটিক্যালস
  • ইউনিটি ফার্মাসিউটিক্যালস হারবাল
  • ইউনিমেড ইউনিহেলথ ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড হারবাল ডিভিশন
  • ভেরিটাস ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড
  • উইনস্টার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড
বাংলাদেশের-সেরা-১০টি-ঔষধ-কোম্পানির-তালিকা

কোন কোম্পানির ঔষধ সবচেয়ে ভালো

আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই জানতে চায় কোন কোম্পানির ঔষধ সবচেয়ে ভালো। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক বাংলাদেশের কোন কোম্পানির ঔষধ সবচেয়ে ভালো। আমাদের দেশে এমন অনেক কোম্পানি আছে যেগুলো গুণগত মন সম্পন্ন ওষুধ তৈরি করছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও বিশ্বস্ত একটি কোম্পানি হচ্ছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড। এই কোম্পানিটি ১৯৯৮ সাল থেকে অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সাথে ঔষধ তৈরি করছেন।
আরো পড়ুনঃ

স্কয়ার কোম্পানির সকল পণ্য আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী তৈরি হয়। স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালস এর ঔষধ GMP (Good Manufacturing Practice) অনুযায়ী উৎপাদিত হয়। যার ফলে সারা বিশ্বের বিভিন্ন ওষুধ পরীক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন WHO, UK,MHRA,TGA and UNICEF এজন্য নিকট স্বীকৃতি পেয়েছে। এই কোম্পানির বিভিন্ন প্রোডাক্ট যেমন এন্টিবায়োটিক পেইনকিলার ইনসুলিন হারবাল মেডিসিন সহ নানা ক্যাটাগরির ওষুধ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত।

স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল এর নিজস্ব আর অ্যান্ড ডি আছে অর্থাৎ নিজস্ব ল্যাবরেটরী আছে যেখানে নিয়মিত গবেষণা ও নতুন নতুন উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করা হয়। বর্তমানে অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সাথে বিশ্বের প্রায় ৪৫টি দেশে ঔষধ রপ্তানি করছেন কোম্পানিটি। স্কয়ার ছাড়াও আরো কিছু কোম্পানি আছে যে কোম্পানিগুলো ভালো পণ্য সরবরাহ করে থাকে যেমন বেক্সিমকো, ইনসেপ্টা, একমি, রেনেটা।

বাংলাদেশের মোট কতটি ঔষধ কোম্পানি আছে

আমাদের মনে অনেক সময় প্রশ্ন জাগে বাংলাদেশ কতগুলো ঔষধ কোম্পানি আছে। আবার কৌতুহল বসত অনেকেই বিভিন্ন জায়গায় জানার চেষ্টা করে থাকেন এই সম্পর্কে। তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক বাংলাদেশের মোট কতটি ঔষধ কোম্পানি আছে। Poidata এর তথ্য অনুযায়ী ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের মোট ৯৮৬ টি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি আছে। এই কোম্পানি গুলোর মধ্যেও শুধুমাত্র ঢাকাতে আছে ৩৫৩ টি কোম্পানি।

বাকি সমস্ত কোম্পানি আছে ঢাকার বাহিরে। আবার DGDA এর তথ্য অনুসারে ২৫৭ টি লাইসেন্সকৃত ঔষধ উৎপাদন কারখানা রয়েছে বাংলাদেশে। এদের মধ্যে ১৫০ টি কারখানা বর্তমানে সক্রিয় আছে।
উৎপাদনের ধরন অনুযায়ী বেশ কিছু কোম্পানি আছে যার মধ্যে অ্যালোপ্যাথিক কোম্পানি ১৯৯ টি, আয়ুর্বেদিক ১৭২ টি, ইউনানী ৫০০ টি, হারবাল ২৯ টি, হোমিওপ্যাথিক ২৮ টি। তবে এদের মধ্যে ৩০০ টি কোম্পানি নিবন্ধন প্রাপ্ত কোম্পানি হিসেবে স্বীকৃতি আছে।

বাংলাদেশের মোট কতটি ঔষধ কোম্পানি আছে

বর্তমানে বাংলাদেশের হাসপাতাল ও ক্লিনিক গুলোতে ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টটিভদের এতটাই আনাগোনা দেখা যায় যে, প্রত্যেকের মনে প্রশ্ন জাগে বাংলাদেশ আসলে কতগুলো ওষুধ কোম্পানি আছে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক বাংলাদেশের মোট কতটি ওষুধ কোম্পানি আছে। বর্তমানে আমাদের বাংলাদেশে প্রায়ই ৯৮৬ টি ওষুধ কোম্পানি আছে। ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত বিভিন্নভাবে পর্যবেক্ষণ ও গণনা করে এই তথ্য পাওয়া যায়।

এদের মধ্যে আবার লাইসেন্সকৃত কোম্পানির সংখ্যা হচ্ছে ৯০০। তবে লাইসেন্সধারী ও কার্যকরী ঔষধ কোম্পানির সংখ্যা হচ্ছে ৩০০। এছাড়া আরো বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে উৎপাদনের দিক থেকে এলোপ্যাথিক কোম্পানি ১৯৯, আয়ুর্বেদিক ১৭২, ইউনানী ৫০০, হোমিওপ্যাথিক ২৮। এই কোম্পানিগুলো সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন ওষুধ উৎপাদন, সরবরাহ ও জনগণের কাছে বিক্রয় করছে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ওষুধ কোম্পানি কোনটি

বাংলাদেশে প্রায় ৯৮৬ টি কোম্পানি আছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় দশটি কোম্পানি সম্পর্কে এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু অনেকেই জানতে চান বাংলাদেশের যতগুলো কোম্পানি আছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় কোন কোম্পানি। তাই আজকের এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হলো বাংলাদেশের ঔষধ কোম্পানির জগতে সবচেয়ে বড় কোম্পানি কোনটি। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঔষধ কোম্পানির নাম হচ্ছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।

এই কোম্পানিটি ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বর্তমান সময় পর্যন্ত সবচেয়ে শীর্ষ স্থানে অবস্থান করছেন। স্কয়ার কোম্পানি শুধু দেশের বাজারে নয় আন্তর্জাতিক বাজারে একটা ভালো অবস্থান তৈরি করেছে। সারা বাংলাদেশের ঔষধ কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১৭ থেকে ১৮% মার্কেট শেয়ার দখল করে আছে স্কয়ার কোম্পানি। এই প্রতিষ্ঠান প্রতিবছর একশোর উপরে নতুন পণ্য নিবন্ধন নেই এবং ৮০০ এর উপরে ঔষধ তৈরি করে। কোম্পানির ওষুধের সংখ্যা, পণ্যের মান, সরবরাহ, দাম বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে দেখা যায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কোম্পানি হচ্ছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস।
বাংলাদেশের-সেরা-১০টি-ঔষধ-কোম্পানির-তালিকা

সরকারি ঔষধ কোম্পানির নাম

বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি ঔষধ কোম্পানির নাম হচ্ছে এসেন্সিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড। এই কোম্পানিটি মূলত ১৯৩০ সালে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ওষুধ উৎপাদনে কাজ শুরু করেন। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের জন্য বিনামূল্যে মানসম্পন্ন ওষুধ তৈরি ও সরবরাহ করাই এই কোম্পানির উদ্দেশ্য। বাংলাদেশের যত সরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক এবং স্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে সেখানে এই প্রতিষ্ঠান থেকে ঔষধ সরবরাহ করা হয়।

সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এটি EDCL বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার(WHO) এর গাইডলাইন অনুসারে ওষুধ উৎপাদন করে এবং GMP( Good Manudacturing Practice) অনুযায়ী সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে।বর্তমানে এই কোম্পানিটির তিনটি অত্যাধুনিক উৎপাদন ইউনিট রয়েছে। এদের মধ্যে একটি হল টঙ্গী(গাজীপুর) ঘোড়াশাল(নরসিংদী) এবং একটি সম্পূর্ণ নতুন ও আধুনিক ইউনিট গোপালগঞ্জে নির্মিত হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠান নিয়মিত ট্যাবলেট ক্যাপসুল সিরাপ ইনজেকশন সহ বিভিন্ন ধরনের ঔষধ তৈরি করছেন।

নিষিদ্ধ ওষুধ কোম্পানির নাম

বাংলাদেশে এমন কিছু কোম্পানি আছে যেগুলোর ঔষধ মানব স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। গুণগত মান খুবই খারাপ। তাই এসব কোম্পানির ওষুধ উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু কোন কোন কোম্পানির ঔষধ নিষিদ্ধ এটা আপনারা অনেকেই জানতে চান। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের উচ্চ আদালতের একটি আদেশে প্রায় ২০টি কোম্পানির ওষুধ উৎপাদন একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হয়।এছাড়াও এর আগে আরও ১৪ টি কোম্পানির এন্টিবায়োটিক উৎপাদন বন্ধের জন্য আদেশ দেওয়া হয়।

যে ২০ টি কোম্পানির ওষুধ উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয় সেগুলো হল
  • এক্সিম ফার্মা
  • এভার্ট ফার্মা
  • বিকল্প ফার্মা
  • ডলফিন ফার্মা
  • ড্রাগ ল্যান্ড
  • গ্লোব ল্যাবরেটরীজ
  • জলফা ল্যাবস্
  • কাফমা ফার্মা
  • মেডিকো ফার্মা
  • ন্যাশনাল ড্রাগ
  • নর্থ বেঙ্গল ফার্মা
  • রেমো কেমিক্যাল
  • রিড ফার্মা
  • স্কাইল্যাব ফার্মা
  • স্পার্ক ফার্মা
  • স্টার ফার্মা
  • সুনিপন ফার্মা
  • টুডে ফার্মা
  • ট্রপিক্যাল ফার্মা

ইউনানী ঔষধ কোম্পানির তালিকা

বাংলাদেশের প্রায়ই ৫০০টির মত ইউনানী ঔষধ কোম্পানি আছে এদের মধ্যে প্রায় সবগুলোই লাইসেন্স প্রাপ্ত এবং চলমান আছে। দিন দিন ইউনানী ঔষধ কোম্পানির চাহিদা এবং উৎপাদন আরো বেড়ে চলছে। এলোপ্যাথিক ওষুধের পাশাপাশি ইউনানী ঔষধ এর ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রতিনিয়তই বিভিন্ন কোম্পানি তৈরি হচ্ছে। তাই এখানে উল্লেখ করা হবে বাংলাদেশের সেরা ২০ টি ইউনানী ওষুধ কোম্পানির নাম। চলুন তাহলে নাম গুলো জেনে নেয়া যাক।

বাংলাদেশের সেরা ২০ টি ইউনানী ঔষধ কোম্পানির নাম
  • A H Janokallay
  • Active Unani Laboratories
  • Adex Pharmaceuticals (Unani)
  • Adora Pharma
  • Al-Hakim Pharmaceuticals
  • Al Shafa Pharmaceuticals
  • Amco Laboratories
  • Ampex Pharmaceuticals
  • Asia Laboratories
  • Basic Pharmaceuticals
  • Bengal Harbs Labrotories
  • Bio Natures Ltd
  • Botanic Pharma
  • Bucfo Pharma
  • Cosmico Chemicals
  • Daffodil Pharmaceuticals
  • Deeplaid Pharmaco Ltd
  • Dhaka Pharma
  • Drug International Unani Ltd
  • Eastern Pharma

FAQ/ সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্নঃ বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো ওষুধ কোম্পানি কোনটি?
উত্তরঃ ওষুধের গুণগত মান, সময়মতো সরবরাহ ও দামের দিক থেকে সবচেয়ে ভালো কোম্পানি হচ্ছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড।

প্রশ্নঃ বাংলাদেশের কয়েকটি ওষুধ কোম্পানির নাম কি কি?
উত্তরঃ স্কয়ার,বেক্সিমকো, অপসোনিন, একমি, ইনসেপ্টা, এসিআই, হেলথ কেয়ার, রেনেটা, স্কাইপ, বিকন।

প্রশ্নঃ বাংলাদেশের মোট কতটি ওষুধ কোম্পানি আছে?
উত্তরঃ বাংলাদেশের মোট ঔষধ কোম্পানির সংখ্যা হচ্ছে ৯৮৬।

প্রশ্নঃ বাংলাদেশী সরকারি ওষুধ কোম্পানি কোনটি
উত্তরঃ বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি ওষুধ কোম্পানি হল এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড।

প্রশ্নঃ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কোম্পানির নাম কি?
উত্তরঃ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কোম্পানির নাম হচ্ছে বেক্সিমকো।

প্রশ্নঃ অপসোনিন ফার্মার মালিক কে?
উত্তরঃ অপসোনিন ফার্মার মালিক হল আব্দুল মালেক খান।

প্রশ্নঃ রেনেটা কোম্পানির মালিক কে?
উত্তরঃ রেনেটা কোম্পানির মালিক হলো সৈয়দ হুমায়ুন কবির।

প্রশ্নঃ ইনসেপ্টার মালিক কে?
উত্তরঃ ইনসেপ্টা কোম্পানির মালিক হলো আব্দুল মুক্তাদির।

প্রশ্নঃ ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল এর মালিক কে?
উত্তরঃ ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল এর মালিক হলো আমজাদ হোসেন সাহেব।

প্রশ্নঃ রেনামাইসিন এর কাজ কি?
উত্তরঃ নিউমোনিয়া রোগের জন্য রেনামাইসিন ভালো কাজ করে।

শেষ কথাঃ বাংলাদেশের সেরা ১০টি ঔষধ কোম্পানির তালিকা জেনে নিন

বর্তমানে আমাদের দেশের প্রায় ১৭ কোটি জনগণের ঔষধ সরবরাহ করার জন্য ৯৮৬ টি নিবন্ধিত ওষুধ কোম্পানি আছে। এই কোম্পানিগুলোর মধ্যে কোন দশটি কোম্পানি সবচেয়ে ভালো তার তালিকা এ আর্টিকেলে উল্লেখ করা হয়েছে। ঔষধের গুণগত মান, সরবরাহ, সার্ভিস, ও দাম বিবেচনা করে সবচেয়ে ভাল ১০ টি কোম্পানির তালিকা উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ এই দশটি কোম্পানির ঔষধ আপনি নিঃসন্দেহে এবং চোখ বন্ধ করে কিনতে পারেন।

আশা করি উপরের আলোচনা আপনারা খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। এই দশটি কোম্পানির ছাড়াও কিছু ভাল কোম্পানি আছে যেগুলোর নাম এখানে উল্লেখ করা হয়নি। আমাদের এই আর্টিকেলের নিয়মিত এরকম বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমৃদ্ধ পোস্ট পাবলিশ করা হয়। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে আমাদের এই আর্টিকেলের সঙ্গে থাকুন। আজকের আর্টিকেল ভালো লাগলে বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের মাঝে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এট্রাকশন আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url