ঢেঁকি শাক খাওয়ার চমৎকার কয়েকটি উপকারিতা অপকারিতা ও পুষ্টিগুন
সম্মানিত পাঠক আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ শাকসবজি পাওয়া
যায়। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি শাক হলো ঢেঁকি শাক। আজকের এই আর্টিকেলে ঢেঁকি
শাক খাওয়ার চমৎকার কয়েকটি উপকারিতা অপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আলোচনা করা
হবে।

এছাড়া আরো যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে তা হলো ঢেঁকি শাকের শিকড়ের
উপকারিতা, গর্ভাবস্থায় ঢেঁকি শাকের উপকারিতা, ঢেঁকি শাক রেসিপি সম্পর্কে। তাই
ঢেঁকি শাক সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য জানতে এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার
অনুরোধ রইলো।
পোস্ট সূচিপত্রঃ ঢেঁকি শাক খাওয়ার চমৎকার কয়েকটি উপকারিতা অপকারিতা ও পুষ্টিগুন
- ঢেঁকি শাক খাওয়ার চমৎকার কয়েকটি উপকারিতা অপকারিতা ও পুষ্টিগুন
- ঢেঁকি শাকের শিকড়ের উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় ঢেঁকি শাকের উপকারিতা
- ডায়াবেটিস নিরাময়ে ঢেঁকি শাকের উপকারিতা
- ঢেঁকি শাক রেসিপি
- ঢেঁকি শাকের ইংরেজি নাম কি
- ঢেঁকি শাকের ছবি
- ঢেঁকি শাক দেখতে কেমন
- ঢেঁকি শাক খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর
- লেখকের মন্তব্যঃ ঢেঁকি শাক খাওয়ার চমৎকার কয়েকটি উপকারিতা অপকারিতা ও পুষ্টিগুন
ঢেঁকি শাক খাওয়ার চমৎকার কয়েকটি উপকারিতা অপকারিতা ও পুষ্টিগুন
আমাদের দেশের সবচেয়ে কম দামে পুষ্টিকর খাবার বলতে গেলে শাকসবজিকে বুঝানো হয়।
বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের শাক অত্যন্ত কম দামে পাওয়া যায়। কারণ এসব শাকসবজি
রাস্তার আশেপাশে অথবা ফসলি জমিতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে
উল্লেখযোগ্য একটি শাক হলো ঢেঁকি শাক।
আরো পড়ুনঃ
লজ্জাবতী গাছের ২০টি উপকারিতা জানুন
ঢেকি শাক হলো অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ একটি শাক। ঢেঁকি শাক খাওয়ার
মাধ্যমে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান যোগ হয় এবং আমরা বিভিন্ন
উপকারিতা পেয়ে থাকি। ঢেঁকি শাক খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে কি কি উপকার হয় কি কি
অপকার হয় এবং এর পুষ্টিগুণ কি চলুন জেনে নেওয়া যাক।
ঢেঁকি শাকের উপকারিতা
ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করেঃ ঢেঁকি শাকের মধ্যে বিদ্যমান আছে
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। সেটা হতে
পারে ফুসফুসের ক্যান্সার, ত্বকের ক্যান্সার অথবা গর্ভ ক্যান্সার।
দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করেঃ প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ শাক হল ঢেকি
শাক। তাই নিয়মিত ঢেঁকি শাক খাওয়ার ফলে চোখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং
দৃষ্টিশক্তি বেড়ে যায়। সেই সাথে রাতকানা রোগ দূর করতে সাহায্য করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ সাধারণত যেসব খাবারের মধ্যে ফাইবার বেশি থাকে এবং
ক্যালরি কম থাকে সেসব খাবার খাওয়ার মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। আর ঢেঁকি
শাক হল সেরকম একটি খাবার। তাই ঢেঁকি-শাক নিয়মিত খাওয়ার ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণ
থাকে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ উচ্চ মাত্রার ফসফরাস সমৃদ্ধ শাক হলো ঢেঁকি
শাক। ঢেঁকি শাক নিয়মিত খাওয়ার ফলে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণ থাকে যার কারণে
প্রতিটি ব্যক্তির ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ থাকে।
ক্ষুধামন্দ ভাব কমিয়ে দেয়ঃ যদি আপনার দীর্ঘদিন থেকে ক্ষুধা মন্দ ভাব থাকে তাহলে
আপনার জন্য উত্তম সমাধান হতে পারে ঢেকি শাক। কারণ কোন মানুষ নিয়মিত ঢেঁকি শাক
খেলে তার ক্ষুধা মন্দ ভাব দূর হয়ে যায়।
রক্তস্বল্পতা দূর করেঃ ঢেঁকি শাকের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন উপস্থিত আছে। যার
কারণে নিয়মিত ঢেঁকি শাক খাওয়ার ফলে শরীরে রক্ত তৈরি হয়। আর রক্ত তৈরি হওয়ার
কারণে শরীরের রক্তস্বল্পতা থাকে না।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ ঢেঁকি শাকের মধ্যে এন্টি অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি
বিদ্যমান থাকায় এটি নিয়মিত গ্রহণ করার কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়।
এবং চোখের ক্ষমতাও অনেকটা বেড়ে যায়।
দাঁতের ক্ষত দূর হয়ঃ ঢেঁকি শাকের মধ্যে ভিটামিন সি থাকায় এটি দাঁতের ক্ষয় রোধ
করতে সাহায্য করে। যদি কোন কারণে আপনার দাঁতে ক্যাভিটি অথবা দাঁত ক্ষয় জনিত কোন
সমস্যা থাকে তাহলে আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো সমাধান হতে পারে ঢেঁকি শাক।
হাড়ের ক্ষয় রোধ করেঃ ঢেঁকি শাকের মধ্যে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম
বিদ্যমান আছে, যা মানুষের হাড় ক্ষয়রোধ করতে সাহায্য করে। সাধারণত বয়স্ক
মানুষের হাড় ক্ষয় বেশি হয় তাই তারা নিয়মিত এই শাকটি খেলে আর হার ক্ষয় হবে না।
হজম শক্তি বাড়িয়ে দেয়ঃ ঢেঁকি শাকের মধ্যে যেসব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আছে এসব
উপাদান পরিপাকতন্ত্র খুবই ভালো রাখে, যার কারণে কোন মানুষ নিয়মিত ঢেঁকি শাক খেলে
তার হজম শক্তি বেড়ে যায়।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দেয়ঃ ঢেঁকি শাকের মধ্যে এন্টি অক্সিডেন্ট বিদ্যমান
থাকায় এটি মানুষের ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দেয়। তাই আপনি যদি আপনার ত্বকের
উজ্জ্বলতা বাড়াতে চান তাহলে তার জন্য নিয়মিত ঢেঁকি শাক খাওয়ার পরামর্শ রইল।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ ঢেঁকি শাকের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম ও
সোডিয়াম বিদ্যমান আছে। পটাশিয়াম রক্তের চাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে আর
সোডিয়াম রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তাই ঢেঁকি শাক খাওয়ার ফলে রক্তের চাপ খুব
সহজেই নিয়ন্ত্রণ রাখা যায়।
স্বাসতন্ত্র ভালো রাখেঃ ঢেঁকি শাকের মধ্যে এমন অনেক উপকারী উপাদান আছে যেগুলো
মানুষের স্বাসতন্ত্র ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাই আপনার শ্বাসতন্ত্র ভালো রাখার
জন্য নিয়মিত ঢেঁকি শাক খেতে পারেন।
মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ ঢেঁকি শাকের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে খনিজ উপাদান ও
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় ঢেঁকি শাক নিয়মিত খাওয়ার কারণে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য
ভালো থাকে।
ব্যথা কমাতে সাহায্য করেঃ ঢেঁকি শাকের মধ্যে অনেক পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান থাকায়
এটি নিয়মিত খাওয়ার কারণে শরীরের ভেতরে থাকা ব্যথা দ্রুত কমাতে সাহায্য করে।
ঢেঁকি শাক খাওয়ার অপকারিতা
পৃথিবীতে প্রত্যেকটা জিনিসেরই সুবিধা ও অসুবিধা দুইটা সাইট থাকে। আমরা সুবিধা
নেয়ার আশায় যেগুলো গ্রহণ করি সামান্য কিছু ভুল ত্রুটির কারণে সেখান থেকে অনেক
বড় অসুবিধা পেতে পারি। তাই ঢেঁকি শাক খাওয়ার যেমন অনেক উপকারিতা আছে তেমনি এর
কিছু অপকারিতাও আছে। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক ঢেঁকি শাক খাওয়ার অপকারিতা কি
কি।
আরো পড়ুনঃ
গর্ভাবস্থায় কদবেল খাওয়ার উপকারিতা
- অতিরিক্ত ঢেঁকি শাক খাওয়ার কারণে গ্যাস্ট্রিক জনিত সমস্যা হতে পারে।
- অতিরিক্ত ঢেঁকি শাক খাওয়ার কারণে বদ হজম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
- ঢেঁকি শাক খাওয়ার কারণে থাইরয়েড এর হরমোন উৎপাদন কম হতে পারে।
- বেশি ঢেঁকি শাক খাওয়ার কারণে এলার্জি বেড়ে যেতে পারে।
- ঢেঁকি শাক বেশি পরিমাণে খেলে বমি বমি ভাব হতে পারে।
- ঢেঁকি শাক খাওয়ার কারণে আপনার পাকস্থলী কার্যক্রম কমে যেতে পারে
ঢেঁকি শাকের পুষ্টিগুণ
ঢেঁকি শাক হল এমন একটি শাক যার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান আছে।
এক কথায় বলতে গেলে প্রচুর
পুষ্টিগুনে
ভরা একটি খাবারের নাম হল ঢেঁকি শাক। নিয়মিত ঢেঁকি শাক খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে
বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান যোগ হয়। যার ফলে আমরা নিয়মিত ঢেঁকি
শাক খাওয়ার ফলে বিভিন্ন রোগ ব্যাধি থেকে আমরা মুক্তি পায়। তাহলে চলুন জেনে
নেওয়া যাক ঢেঁকি শাকের পুষ্টিগুন সম্পর্কে।
ঢেঁকি শাকের পুষ্টিগুণসমুহঃ
ক্রমিক নং | পুষ্টি উপাদানের নাম | পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ |
---|---|---|
১ | ক্যালোরি | ৩৪ কিলো ক্যালরি |
২ | শর্করা | ৫.৫৪ গ্রাম |
৩ | ফ্যাট | ০.৪ গ্রাম |
৪ | প্রোটিন | ৪.৫৫ গ্রাম |
৫ | পানি | ৯২.২১ গ্রাম |
৬ | আশ | ২.৮ গ্রাম |
৭ | ভিটামিন বি১ | ০.০২ মিলিগ্রাম |
৮ | ভিটামিন বি২ | ০.২১ মিলিগ্রাম |
৯ | ভিটামিন বি৩ | ৪.৯ মিলিগ্রাম |
১০ | ভিটামিন বি৬ | ০.১৪৯ মিলিগ্রাম |
১১ | ভিটামিন সি | ২৬.৬ মিলিগ্রাম |
১২ | ভিটামিন এ | ৩৬১৭ আই ইউ |
১৩ | সোডিয়াম | ১ মিলিগ্রাম |
১৪ | পটাশিয়াম | ৩৭০ মিলিগ্রাম |
১৫ | ক্যালসিয়াম | ৩২ মিলিগ্রাম |
১৬ | ফসফরাস | ৪৮ মিলিগ্রাম |
১৭ | ম্যাগনেসিয়াম | ৩৪ মিলিগ্রাম |
১৮ | লৌহ | ১.৩১ মিলিগ্রাম |
১৯ | জিংক | ০.৮৩ মিলিগ্রাম |
২০ | সেলেনিয়াম | ০.৭ মাইক্রো গ্রাম |
২১ | তামা | ০.৩২ মিলিগ্রাম |
২২ | ম্যাঙ্গানিজ | ০.৫১ মিলিগ্রাম |
২৩ | খাদ্য পুষ্টি | প্রয়োজন মত |
২৪ | কার্বোহাইডেট | পরিমাণ মত |
ঢেঁকি শাকের শিকড়ের উপকারিতা
আপনারা অনেকেই ঢেঁকি শাকের শিকড়ের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে
চেয়েছেন।আসলে ঢেঁকি শাক যেমন আমাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান সরবরাহ
করে এবং বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে। ঠিক তেমনি ঢেঁকি শাকের শিকড় আমাদের জন্য
অনেক বেশি উপকারী। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক ঢেঁকি শাকের শিকড় আমাদের জন্য কি
কি উপকার করে থাকে।
আরো পড়ুনঃ
সজনে ডাটা খাওয়ার উপকারিতা
হৃদরোগ দূরে রাখেঃ ঢেঁকি শাকের শিকড় বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি গুণে ভরা। তাই নিয়মিত
ঢেঁকি শাকের শিকড় খাওয়ার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
ত্বক ভালো রাখেঃ ঢেঁকি শাকের শিকড়ের মধ্যে ভিটামিন সি ও ভিটামিন এ প্রচুর
পরিমাণে উপস্থিত থাকে। তাই নিয়মিত ঢেঁকি শাক শিকড় খাওয়ার ফলে ত্বক থাকে
উজ্জ্বল ও সুন্দর।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন
সি সমৃদ্ধ
যেসব শাক পাওয়া যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ঢেঁকি শাক। ভিটামিন সি এবং
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করেঃ ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণের জন্য অত্যন্ত কার্যকর একটি
খাবারের নাম হল ঢেকে শাক। যদি আপনার ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হয় তাহলে
আজই ঢেঁকি শাক খাওয়া শুরু করুন।
হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ ঢেঁকি শাকের শিকড়ের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান
পর্যাপ্ত পরিমাণে বিদ্যমান থাকে। আর এসব পুষ্টি উপাদান পরিপাকতন্ত্র ভালো রাখে
এবং হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
গর্ভাবস্থায় ঢেঁকি শাকের উপকারিতা
ঢেঁকি শাক আমাদের জন্য অনেক উপকারী এটা আমরা সবাই জানি কিন্তু গর্ব অবস্থায়
ঢেঁকি শাকের উপকারিতা আছে কিনা এই বিষয়ে আপনারা অনেকেই জানতে চান। তাই চলুন
আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জেনে নেওয়া যাক ঢেঁকি শাক একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য
যেসব উপকার করে সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য।
ভ্রূণের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ ঢেঁকি শাকের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান
প্রচুর পরিমাণে উপস্থিত থাকে যার কারণে গর্ভাবস্থায় ঢেঁকি শাক খেলে ভ্রুনের
স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও দ্রুত বড় হয়।
শিশুর হাড়ের গঠন ভালো হয়ঃ ঢেকি শাকের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম বিদ্যমান
আছে যার কারণে গর্ভ অবস্থায় ঢেঁকি শাক খেলে শিশুর হাড়ের গঠন ভালো হয়।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করেঃ গর্ভাবস্থায় ঢেঁকি শাক খাওয়ার সবচেয়ে বড় উপকারিতা
হচ্ছে রক্তের চাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ থাকা খুবই
জরুরী। তাই গর্ব অবস্থায় ঢেঁকি শাক খাওয়া খুবই প্রয়োজন।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করেঃ গর্ভে থাকা শিশু ও গর্ভবতী মায়ের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে ঢেঁকি শাক। কারণ ঢেঁকি শাকের মধ্যে প্রচুর
পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান আছে।
হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করেঃ গর্ভবতী মায়ের হজম শক্তি বাড়ানোর জন্য অত্যন্ত
কার্যকরী একটি খাবার হলো ঢেঁকি শাক। গর্ভাবস্থায় ঢেঁকি শাক খেলে হজম শক্তি বেড়ে
যায়।
শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করেঃ ঢেঁকি শাকের মধ্যে এন্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি
আছে যেগুলো গর্ভবতী মায়ের শরীর থেকে বিষাক্ত টক্সিন বের করতে সাহায্য করে। যার
ফলে বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ ঢেঁকি শাকের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম ও
সোডিয়াম বিদ্যমান আছে। যে উপাদান গুলো একজন গর্ভবতী মায়ের হার্টের স্বাস্থ্য
ভালো রাখতে সাহায্য করে। এতে করে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি একেবারেই কমে যায়।
রক্তস্বল্পতা কমায়ঃ প্রচুর পরিমাণে আয়রন সমৃদ্ধ একটি শাক হলো ঢেঁকি শাক। আয়রন
গর্ভবতী মায়ের শরীরে রক্ত বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। যার ফলে ঢেঁকি শাক খাওয়ার
কারণে গর্ভবতী মায়ের শরীরের রক্তের সল্পতা দেখা যায় না।
দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করেঃ ঢেঁকি শাকের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ
বিদ্যমান আছে। ভিটামিন এ গর্ভবতী মা ও গর্ভে থাকা শিশুর দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে
সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ ঢেঁকি শাকের মধ্যে এমন কিছু উপাদান আছে
যেগুলো মানুষের শরীরে ইনসুলিন বাড়াতে সাহায্য করে। আর ইনসুলিন বেড়ে যাওয়ার
কারণে গর্ভবতী মায়ের ডায়াবেটিস জনিত সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
ডায়াবেটিস নিরাময়ে ঢেঁকি শাকের উপকারিতা
আপনারা অনেকেই ডায়াবেটিস নিরাময়ে ঢেঁকি শাকের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত সকল
তথ্য জানতে চান। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ঢেঁকি শাক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করে থাকে। ঢেঁকি শাক এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান
বিদ্যামান আছে। এসব পুষ্টি উপাদানের মধ্যে কয়েকটি উপাদান আছে যেগুলো মানুষের
শরীরে ইনসুলিন তৈরি করতে সাহায্য করে।
আর ইনসুলিন তৈরি হওয়ার মাধ্যমে ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যদিও
ডায়াবেটিস একবার হয়ে গেলে আর ভালো হয় না। তারপরও আপনি যদি নিয়মিত ঢেঁকি শাক
খেতে পারেন দেখবেন আপনার শরীরে ইনসুলিন তৈরি হওয়ার কারণে ডায়াবেটিসের চাপ অনেক
কমে যাবে। তাই আপনি আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য নিঃসন্দেহে ঢেঁকি শাক
খেতে পারেন।
ঢেঁকি শাক রেসিপি
ঢেঁকি শাক কিভাবে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায় আপনারা অনেকেই এই বিষয়ে জানতে
চান। এই বিষয়টি আপনার আমার সবারই কমবেশি জানা প্রয়োজন। কারণ ঢেঁকি শাক সঠিকভাবে
না খেলে উপকারের চেয়ে অপকার বেশি হতে পারে।
ঢেঁকি শাক খাওয়ার সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি হচ্ছে শাক হিসেবে রান্না করে খাওয়া। আর
শাক হিসেবে রান্না করে খেতে হলে প্রথমে আপনাকে রান্নার রেসিপি জানতে হবে। চলুন
তাহলে জেনে নেওয়া যাক ঢেঁকি শাক রান্নার সঠিক রেসিপি সম্পর্কে বিস্তারিত সকল
তথ্য।
- প্রথমে আপনাকে রাস্তার আশেপাশে অথবা জমির আইল থেকে ভালো ঢেঁকি শাক গুলো তুলে নিয়ে আসতে হবে।
- এরপর এগুলোকে ভালোভাবে পরিষ্কার পানি দিয়ে কয়েকবার ধুয়ে নিতে হবে।
- পরিষ্কারভাবে ধোয়া হয়ে গেলে কুচি কুচি করে কেটে নিতে হবে।
- তবে লক্ষ রাখতে হবে যেন কোনভাবেই ময়লা না লেগে থাকে।
- এরপর কড়াইয়ের মধ্যে কুচি কুচি করা ঢেঁকি শাকগুলো ঢেলে নিতে হবে।
- কড়ায়টিকে চুলায় বসিয়ে দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ জ্বাল দিতে হবে।
- তবে জাল দেওয়ার সময় অবশ্যই ঢেঁকি শাকের মধ্যে পরিমাণ মতো লবণ হলুদ ও তেল দিতে হবে।
- কড়াইয়ে জাল দেওয়া শাকগুলো থেকে পানি শুকিয়ে যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে পরিমাণ মতো পেঁয়াজ ও রসুন এর মধ্যে মিশিয়ে দিতে হবে।
- পেঁয়াজ ও রসুন মিশানোর পরে অল্প অল্প করে তেল দিয়ে খুবই ভালোভাবে ঢেঁকি শাক গুলো ভেজে নিতে হবে।
- এভাবে বেশ কিছুক্ষণ ভালোভাবে ভেজে নিয়ে খাবার মত উপযুক্ত হলে কড়াইটিকে চুলা থেকে নামিয়ে ফেলতে হবে।
ঢেঁকি শাকের ইংরেজি নাম কি
বাঙালি হিসেবে আমরা ঢেঁকি শাকের নাম কমবেশি সবাই জানি। তবে এলাকা ভেদে বিভিন্ন
এলাকায় বিভিন্ন রকম নাম হতে পারে। আমরা কম বেশি বাংলা নাম সবাই জানলেও ইংরেজি
নাম আমরা অনেকেই জানি না। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের ইংরেজি নাম জানার
প্রয়োজন হয়। তখন আমরা বিভিন্ন জায়গায় সার্চ করে থাকি।
চলুন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জেনে নেওয়া যাক ঢেকি শাকের ইংরেজি নাম
কি। ঢেঁকি শাকের ইংরেজও নামগুলো Diplazium esculentum. আশা করি আপনারা ঢেঁকি
শাকের সঠিক ইংরেজি নামটি পেয়েছেন।
ঢেঁকি শাকের ছবি
ঢেঁকি শাক আমাদের মানব দেহের জন্য অনেক বেশি উপকারী। ঢেকি শাক আমাদের শরীরে
বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান যোগ করে। নিয়মিত ঢেঁকি শাক খাওয়ার কারণে আমরা
বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে থাকি। ঢেকি শাক আসলে দেখতে কেমন এই বিষয়ে
আমরা অনেকেই জানিনা। তাই চলুন ঢেঁকি শাক দেখতে কেমন হয় অর্থাৎ ঢেঁকি শাকের ছবি
দেখে নেওয়া যাক।
ঢেঁকি শাক দেখতে কেমন
আপনারা অনেকেই জানতে চান ঢেঁকি শাক দেখতে কেমন। প্রথমত ঢেঁকি শাক দেখতে সবুজ
বর্ণের। একটি লম্বা চিকন কোন ডালের মধ্যে অনেকগুলো পাতা থাকে। পাতাগুলো বেশ লম্বা
এবং চিকন।একটি গাছে অসংখ্য ডাল ও অসংখ্য পাতা থাকে। পাতাগুলোর দু প্রান্তে খাজ
কাটা খাজ কাটা থাকে। ডালের সর্বশেষ অংশের পাতাটি একটু চওড়া এবং বড়।
ঢেঁকি শাক খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর
ঢেঁকি শাকের আরেক নাম কি?
আমাদের দেশে সাধারণত ঢেঁকি শাক নামে সবাই এক নামে চিনলেও এটি এলাকা ভেদে এবং দেশ
ভেদে বিভিন্ন নামের হয়ে থাকে। বাংলায় একে ঢেঁকি শাক অথবা পালোই শাক বলে, নেপালি
ভাষায় এই শাককে বলা হয় নিংরো, বেরোতে বলা হয় ডিংকিয়া, উত্তর ভারতে এটাকে বলে
লিঙ্গুদা।
ঢেঁকি শাক কোন ধরনের উদ্ভিদ?
ঢেঁকি শাক হল ফার্ন জাতীয় উদ্ভিদ। এটি বর্ষাকালে রাস্তার আশেপাশে বা ঝোপেঝাড়ে
জন্মাতে দেখা যায়। এই উদ্ভিদটি খুব বেশি বড় হয় না আবার খুব বেশি ছোট হয় না।
এটি মাঝারি আকৃতি হয়ে থাকে।
ঢেঁকি সাগের উপকারিতা?
ঢেঁকি সাগের উপকারিতা অনেক এটা আসলে বলে শেষ করা যাবে না। কারণ ঢেঁকি শাকের মধ্যে
প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান আছে। ঢেঁকি শাক খাওয়ার ফলে এসব পুষ্টি
উপাদান আমাদের শরীরে
যোগ হয়। আর যোগ হওয়ার কারণে আমরা বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা পেয়ে থাকি।
যেমন-রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, রক্তস্বল্পত দূর, রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা বৃদ্ধি, হজম শক্তি বৃদ্ধি আরো অনেক।
ঢেঁকি শাকের ফুল হয় কি?
ঢেঁকি শাক হলো ফার্ণ জাতীয় উদ্ভিদ। এরা সাধারণত বহু বর্ষজীবী উদ্ভিদ। এদের কোন
ফুল ও ফল হয় না। এরা অপুষ্পক ও অবীজি উদ্ভিদ।
ঢেঁকি শাক কি বিষাক্ত?
ঢেঁকি শাক বিষাক্ত নয় তবে সেটি অবশ্যই রান্না করে খেতে হবে। কোনোভাবেই কাঁচা
অবস্থায় খাওয়া যাবেনা। তবে ঢেঁকি শাক খাওয়ার আগে প্রথমে ভালোভাবে ঢেঁকি শাক
চিনতে হবে। কারণ ঢেঁকি শাকের মতো দেখতে অনেক ফার্ণ জাতীয় উদ্ভিদ আছে যেগুলো অনেক
বিষাক্ত। তাই প্রথমে ভালোভাবে ঢেঁকি শাক চিনতে হবে তারপরে রান্না করে খেতে হবে।
লেখকের মন্তব্যঃ ঢেঁকি শাক খাওয়ার চমৎকার কয়েকটি উপকারিতা অপকারিতা ও পুষ্টিগুন
উপরের আলোচনা থেকে আপনারা জানতে পারলেন ঢেঁকি শাক খাওয়ার চমৎকার কয়েকটি
উপকারিতা কয়েকটি অপকারিতা ও ঢেঁকি শাকের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। প্রচুর পরিমাণে
পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ শাক হলো ঢেঁকি শাক। ঢেঁকি শাক আমাদের জন্য অনেক উপকারী তবে কিছু
কিছু ক্ষেত্রে অপকারী হয়ে যায়।
তাই ঢেঁকি শাকের উপকারিতা পাশাপাশি অপকারিতা সম্পর্কেও জানা প্রয়োজন। ঢেঁকি শাক
কিভাবে খেতে হবে এটা সবার আগে জানা প্রয়োজন। কারণ লেখক হিসেবে আমার মন্তব্য
হচ্ছে কোনভাবেই আপনারা ঢেঁকি শাক কাঁচা অবস্থায় খাবেন না। কারণ কাঁচা অবস্থায়
এটি অনেক বিষাক্ত থাকে। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েরা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া
কোনভাবেই ঢেঁকি শাক খাবেন না।
এট্রাকশন আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url